in

হোয়াইট হাউসের ‘বিপর্যয়’ ফেলে এগোতে চান কৌশলী জেলেনস্কি

দৃঢ়চেতা, কিন্তু কৌশলী ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে শুক্রবারের বিতণ্ডার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওভাল অফিসে যে দ্বন্দ্ব হয়েছে তা ইউক্রেনে শান্তির জন্য ‘ইতিবাচক কিছু বয়ে আনেনি’।

দুই দিনের যুক্তরাজ্য সফরের সমাপ্তিতে শুধু ইউক্রেনের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জেলেনস্কি বলেছেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা যখন প্রকাশ্যে হয় তখন শত্রুরা তার সুযোগ নেয়। যদিও তিনি আশা করছেন, হোয়াইট হাউসে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

ওই বৈঠকের পর তাঁর জায়গা থেকে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান চালানোর বিষয়ে যে চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল, সেটি স্বাক্ষর হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যখন তাঁকে চেপে ধরেছিলেন, সে সময় তাঁর ওপর তাঁরা অতর্কিত বাক্‌–আক্রমণ করেছিলেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি জেলেনস্কি। বরং ‘মতভিন্নতার মূল কারণগুলো নিরসনের জন্য আবার আমন্ত্রণ জানানো’ হলে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলবেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

অবশ্য যখন জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করা হয় রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে তিনি আবার হোয়াইট হাউসে যাবেন কি না, তখন তিনি বলেছেন, তিনি শুক্রবার সেখানে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি ট্রেনে ১২ ঘণ্টা ভ্রমণ করেছি, তারপরে ১১ ঘণ্টা উড়োজাহাজে ভ্রমণ করেছি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান অংশীদারদের অন্যতম এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যখন আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সে কারণে হোয়াইট হাউসে আমার উপস্থিত হওয়াটা ছিল আমার জন্য বিনয় দেখানো।’

যুক্তরাজ্য থেকে উড়াল দেওয়ার আগে আগে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে ওই বিপর্যয়কর বৈঠকের পরই যুক্তরাজ্যে এই সফর করেন জেলেনস্কি। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ওই বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার জন্য যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে তাঁকে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে এই যুদ্ধে তাঁর দেশ জিতবে না।

জেলেনস্কি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে যুক্তরাজ্য–ফ্রান্স নেতৃত্বাধীন শান্তিপ্রচেষ্টা যেটা নিয়ে রোববার লন্ডন সম্মেলনে ইউরোপের নেতারা আলোচনা করেছেন, তা আগামী সপ্তাহগুলোতে ফলপ্রসূ হতে পারে। জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তুরস্ক, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার মতো বাল্টিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এবং ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনের মতো নরডিক দেশসহ অন্যান্য দেশ এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে কেমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যায় তা নিয়েও লন্ডন সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, রোববার আলোচনায় খুবই ভালো সূচনা হয়েছে এবং অনেক দেশই নিজেদের প্রয়োজনে শিগগিরই কথা বলবে।

জেলেনস্কি বলেছেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে এক মাসের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব তুলছে সে বিষয়ে তিনি অবগত। তবে তিনি এটা সমর্থন করেন কি না, তা বলেননি। শুধু সাক্ষাৎকারের শেষে ইংরেজিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি সবকিছু সম্পর্কে অবগত।’

নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালালেও তাদের এলাকা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি কখনো মেনে নেবে না। তিনি আবারও উল্লেখ করেন, তিনি শুধু তখনই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে একমত হবেন যখন তাদের ব্যাপকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। এটাই তাঁর দেশের মানুষ চায়।

জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়া দখল করা এলাকা নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার ওপর জোর দিলেও ইউক্রেনের জন্য সব সময় এটা বিবেচিত হবে ‘সাময়িক দখল’ হিসেবে। এমনকি পুরো ইউক্রেন রাশিয়া দখলে নিলে এবং তাদের তাড়ানোর মতো সামরিক শক্তি ইউক্রেনের না থাকলেও সেটাই মনে করা হবে।

জেলেনস্কি বলেন, তিনি অংশীদারদের কাছে চেয়েছেন যেন তাঁরা এই বার্তা হোয়াইট হাউসে পৌঁছে দেন যে তাঁরা মনে করেন, তিন বছর আগে রাশিয়া তাঁর দেশে পুরো মাত্রায় অভিযান চালিয়েছিল। তিনি চাননি যে রাজনীতিবিদেরা ইতিহাস পুনর্লিখন করুন।

হোয়াইট হাউসে শুক্রবারের ওই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উসকানি দিতে চেয়েছিলেন বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, পুতিন ‘আমাদের ঘৃণা করে’ এবং ‘মনে করেন যে আমরা কোনো জাতি নই’। এর কয়েক দিন আগেই পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা ট্রাম্প অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্টের পক্ষের যুক্তিটাও জানতেন। তিনি দৃশ্যত বড় প্রতিবেশীর সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর জন্য জেলেনস্কিকেই দায়ী করেন।

শুক্রবার ওভাল অফিসে ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পর কী কী ঘটেছিল, সেসব বিষয়ে জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্প–জেলেনস্কির ওই বৈঠক শেষে মধ্যাহ্নভোজ ও খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো ছাড়াই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন জেলেনস্কি।

খবরে বেরিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে যেতে বলেছিলেন। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘এটাকে ইতিহাসের কাছে ছেড়ে দেওয়াই’ ছিল সর্বোত্তম।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়: নাহিদ

ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করলেন ট্রাম্প