in

হিজরি সাল কীভাবে এলো?

মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে সুগভীর ভাবে জড়িত রয়েছে হিজরি ক্যালেন্ডার, যাকে আমরা  আরবী ক্যালেন্ডারও বলে থাকি। মুসলমানদের সব উৎসব, ধর্মীয় কাজ এই ক্যালেন্ডার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।

হিজরি ক্যালেন্ডার এর গোড়াপত্তন এর কথা উঠে এলেই ইসলামের তৎকালীন সংগ্রামী একটি চিত্র ফুটে উঠে আমাদের সামনে। “হিজরি” শব্দটি আরবী “হিজরত” থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ “প্রস্থান বা দেশত্যাগ”। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার প্রেরিত ধর্ম ইসলাম এর প্রচার যখন শুরু হয়েছিলো স্বাভাবিক ভাবেই মক্কার কাফেররা এর বিরোধিতা শুরু করেছিলো। কুরায়েশ বংশের কাফেরদের অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদীনায় চলে যান। এই মর্মে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-  ‘স্মরণ করো, কাফিররা তোমাকে বন্দি বা হত্যা করার জন্য কিংবা নির্বাসিত করার চক্রান্ত করে। তারা চক্রান্ত করে; আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেন। আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩০)

হিজরতের এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই হিজরি সালের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এর দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। এই কথার মানে হলো, রাসূল (সা) এর আমল থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে হিজরি সাল গণনা করা হতো, যদিও এর যথার্থ কোনো পান্ডুলিপি তখন বিদ্যমান ছিলোনা। রাসূল (সা) যখন খ্রিষ্টানদের সাথে চুক্তি করেন, তখন সেই চুক্তিপত্রের নিচে হিজরতের ৫ম বর্ষ উল্লেখ করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন।

আমাদের নবী আল্লাহর নির্দেশে যেদিন মক্কা ত্যাগ করলেন, সেই তারিখটি ছিলো ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর। আরবী এই মাসটি ছিলো রবিউল আউয়াল। প্রাক ইসলামী যুগের অনেকেই রবিউল আউয়াল কেই হিজরি সনের প্রথম মাস বলে গণনা করতেন। কিন্ত ইতিহাসবিদদের মতে, হযরত ওমর (রা) মুহররম মাসকেই আরবী প্রথম মাস হিসেবে ধরেছেন। এর কারণের সাথে হিজরতের সূচনার সংক্ষিপ্ত একটি গল্প জড়িত। হিজরতের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিলো যখন রাসূল (সা) এর নবুয়ত এর ১৩ বছর চলে। ওই মাসটি ছিলো জিলহজ্জ মাস। মুসলিম ইতিহাসে প্রথম হিজরত এর দলটি মহররম মাসে মদীনায় গিয়ে পৌছেন, যা ছিলো হিজরতের শুভ সূচনা। মদীনায় সর্বপ্রথম হিজরত করেছেন মুসআব ইবনে উমাইর (রা)। 

হিজরি সন বা তারিখ গণনার গুরুত্ব কেন অনুভূত হলো তা বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আল্লামা ইবনে সমরকন্দী (রহ) বলেন, হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) ইরাকের গভর্ণর থাকাকালীন ওমর (রা) এর কাছে দিন গণনার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করে চিঠি লিখেন। কারণ ওমর (রা) এর বিভিন্ন আদেশ ফরমান যখন বিভিন্ন প্রদেশে রাষ্ট্রে পাঠানো হতো তখন সেখানে কোনো সময়, তারিখ উল্লেখ থাকতোনা। যার ফলে গর্ভণরদের সমস্যায় পরতে হতো।

এই ঘটনার পরই হযরত ওমর (রা) মক্কার প্রসিদ্ধ সব সাহাবীদের নিয়ে এক মজলিসের আয়োজন করেন। এই সময় বিভিন্ন সাহাবী বিভিন্ন মত দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে হযরত আলী (রা) প্রস্তাব দিলেন হিজরতের তাৎপর্যময় ঘটনাই হোক হিজরি সনের ভিত্তি। সভায় এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। হিজরতের ঘটনাকে “সত্য থেকে মিথ্যার পার্থক্য এবং সত্যের সুস্পষ্ট বিজয়” হিসেবে দেখা হয়। যার ফলে হিজরি সনের প্রবর্তন অনেক জরুরি হয়ে দাড়ায় এবং চন্দ্রমাসের হিসাবে নির্ধারিত হওয়া এই বর্ষপঞ্জি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গৌরব এবং তাৎপর্যময় ইতিহাস এর সাক্ষী হয়ে আছে।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Azaher Ali Rajib

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

কাজে অলসতা, পুরস্কার $১৯০০!!!

প্লাজমা অনুমোদন দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।