‘ভুলভুলাইয়া’ সিনেমার সেই ভয় ধরানো অনুভূতি এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে। হিন্দি সিনেমাও যে বিনোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ের শীতল স্রোতে ভাসিয়ে নিতে পারে, এ সিনেমা ছিল তার প্রমাণ।
‘ভুলভুললাইয়া’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় সিনেমা ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ মুক্তি পেয়েছে গত নভেম্বর মাসে। মুক্তির পর বিশ্বজুড়ে ৪২০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে। পেছনে ফেলেছে প্রায় একই সময়ে মুক্তি পাওয়া অজয় দেবগনের ‘সিংহাম এগেইন’ সিনেমাকে। এদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। মুক্তির প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও এখনো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিনেমাটি। রয়েছে বাংলাদেশের টপ ওয়াচিং সিনেমার লিস্টের প্রথমদিকের সারিতে। কেন বাংলাদেশের দর্শকেরা এত পছন্দ করলেন সিনেমাটি?
‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এর গল্প শুরু হয় একটি পুরোনো রাজবাড়ি ঘিরে। কথিত আছে, সে রাজবাড়ির রাজা দেবেন্দ্রনাথ পুনর্জন্ম নেবে। আর তার হাতেই শেষ হবে ভয়ংকর মঞ্জুলিকার রাজত্ব। যে কিনা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসলীলা। তার কারণে রাজবাড়ির কাছে ঘেঁষতে পারে না কেউ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধরে আনা হয় রুহ বাবাকে। কারণ, তিনি দেখতে অবিকল রাজা দেবেন্দ্রনাথের মতো। রুহ বাবার রাজবাড়িতে ফেরা যেন ছিল ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতিফলন!
কিন্তু রুহ বাবা আসার পর থেকেই ঘটতে থাকে একের পর এক ভয় ধরানো ঘটনা। ঘটনাচক্রে দেখা যায়, মঞ্জুলিকা একজন নয়, দুজন। এই দুই মঞ্জুলিকাকে রুহ বাবা কী পারে টেক্কা দিতে? নাকি ঘুরে যাওয়া ঘটনার মোড় আমাদের মাথাও ঘুরিয়ে দেয়?
ভারতীয় সিনেমাজগতে বর্তমানে হরর কমেডি ধারার ছবি রাজত্ব করছে। আর এরই প্রতিফলন দেখা যায় ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ সিনেমাতেও। কার্তিক আরিয়ান রুহ বাবার চরিত্রে দর্শককে আনন্দ দিতে পেরেছেন ভরপুর। সেই সঙ্গে সঞ্জয় মিশ্র, রাজপাল যাদব ও অশ্বিনী কালসেকার ত্রয়ীর পর্দায় উপস্থিতি ছিল হাসির খোরাক জোগানোর অন্যতম অনুষঙ্গ।
‘ভুলভুলাইয়া ৩’ ছবিতে কার্তিক আরিয়ান যেন ছিলেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। তিনি পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছেন মাধুরী দীক্ষিত, বিদ্যা বালানের বিপরীতে। রুহ বাবা হিসেবে তিনি মাতিয়ে রেখেছেন পুরোটা সময়। ট্রেলার মুক্তির পরে তৃপ্তি দিমরিকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা কথা শোনা গেছে। তবে সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি ও অভিনয় যেমন সাবলীল ছিল, তেমনি কার্তিকের সঙ্গে তাঁর রসায়ন ছিল উপভোগ্য। তবে কার্তিক ও তৃপ্তির গানের দৃশ্য সিনেমার গাম্ভীর্যের সঙ্গে তেমন মাননসই মনে হয়নি।
দর্শকদের কাছে এই সিনেমার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বিদ্যা বালান ও মাধুরী দীক্ষিত। ১৭ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘ভুলভুলাইয়া’ সিনেমার মঞ্জুলিকা বিদ্যা বালানকে দর্শক হয়তো চেনেন। কিন্তু এখানে যখন মাধুরী দীক্ষিতও নিজের পরিচয় দেন ‘আমি মঞ্জুলিকা’ বলে, গল্প তখন মোড় নেয় অন্যদিকে। রুহ বাবা-মঞ্জুলিকার যুদ্ধ দেখতে বসে সিনেমা একপর্যায়ে হয়ে ওঠে মঞ্জুলিকার সঙ্গে মঞ্জুলিকার যুদ্ধ!
দুই মঞ্জুলিকা নিজ জায়গা থেকে সেরা অভিনয় করছেন। তবে সাসপেন্সের প্রয়োজনেই হয়তো তাঁদের চরিত্র খুব ভালোভাবে ফুটিতে ওঠা দেখতে পারেন না দর্শক। তাই এদিক থেকে হতাশই হতে হয়। তবে মাধুরী আর বিদ্যার ‘আমি যে তোমার’ গানের সঙ্গে না,চ এই সিনেমার নিঃসন্দেহে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’ পর এ রকম একটি আইকনিক ডুও-র দুর্দান্ত নাচ অনেক দিন চোখে লেগে থাকবে।
তবে ‘ভুলভুলাইয়া ৩’–এর সবচেয়ে মনগলানো অংশ এই সিনেমার শেষটুকু। গতানুগতিক গল্প আর ‘ভুলভুলাইয়া ২’–এর গল্প বলার ধারা দেখা যায় এ ছবিতেও। তবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলতে থাকা এ সিনেমায় একবারের জন্যও অনুমান করা যায় না শেষে কী হতে চলেছে। আর এখানেই যেন পরিচালক আনিস বাজমি বাজিমাত করেছেন।
তিনি শেষ পর্যন্ত দর্শককে শুধু পর্দাতেই ধরে রাখেননি, ভূত নিয়ে ধাঁধায়ও রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাই শেষ অংশ দেখার পর আপনার মনে হতেই পারে, ‘পুরো সিনেমাটাই যেন ধোঁকা দিয়ে গেল।’ তবে এ কথা মনে হওয়ার পরক্ষণেই মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। মনে হয়, বাণিজ্যিক ধারার গড়পড়তা সিনেমাটি কোথাও যেন একটা দাগ কেটে গেল|
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings