আমাদের দেশের ঐতিহ্য ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়ালভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। এটাই এদেশের যুগ- যুগান্তরের গর্ব ও ঐতিহ্য ছিল।
আমাদের দেশের ঐতিহ্য ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়ালভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। এটাই এদেশের যুগ- যুগান্তরের গর্ব ও ঐতিহ্য ছিল। আর সেজন্যই বলা হতো আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও আজকে আমরা দেখছি আমাদের এ বাংলাদেশ গরিব! আমাদের এ দেশের সম সাময়িক দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এক একটি পৃথিবীর গর্বিত দেশের অন্তর্ভুক্ত! ভিয়েতনামের মত দেশ যুগের পর যুগ যুদ্ধ করেও আজকে চায়নার সাথে প্রতিযোগিতা দিচ্ছে! আমরা কী করছি? আমরা শুধু করছি দুর্নীতি আর দুর্নীতি! কী এক আশ্চর্যজনক লজ্জায় আমরা উপনীত! কিভাবে হারিয়ে গেল আমাদের ঐতিহ্য? এত রক্ত আর জীবন এর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে ৫৪টি বছর আমরা পার করে দিলাম, কিন্তু পুরনো পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারলাম না!
আমরা যদি একটু তলিয়ে দেখি গৌরবময় দিনগুলো কেন হারিয়ে গেল? আমি ব্যক্তিগত গবেষণায় যেটা
উপলব্ধি করেছি সেটা হলো মাত্র দুটি কারণে :
১। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সার্বক্ষণিক ষড়যন্ত্র আর প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ।
২। দেশপ্রেমিক ও দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্বের অভাব।
আসুন, প্রথম বিষয়টি নিয়ে একটু মিলিয়ে দেখি-পশ্চিম পাকিস্তানীরা যখন আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে তখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষগণ ত্যাক্ত- বিরক্ত হয়ে উঠতে থাকে। আমাদের বন্ধুবেশি প্রতিবেশী ভারত সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য দাবার গুটি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করতে শুরু করে! ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আগ থেকেই ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। জাল বুনার শুরুতেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে হাতে নেয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তান। পৃথিবীর শক্তিশালী সেনাবাহিনীর দেশ পাকিস্তানকে বিভক্ত করে দিতে পারলে পাকিস্তান দুর্বল দেশে পরিণত হবে, আর বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তান নামক ছোট দেশটিকে গিলে খেয়ে ফেলা সহজ হবে। তাই করল, তারা এক ঢিলে তিন পাখি মারল।
১। পাকিস্তান রাষ্ট্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দুর্বল করে দিতে পারল।
২। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাহায্য সহযোগিতার ছদ্মাবরণে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিল।
৩। আমাদের ক্ষমতাসীনদেরকে ভারতীয় পুতুল ও বা এজেন্ট বানিয়ে বাংলাদেশকে তাদের একমাত্র বৃহৎ বাজার বানিয়ে নিল এবং আমাদেরকে ভারতনির্ভর করে তুলল। আমাদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দখলে নেয়ার জন্য তারা প্রথম কাজটি করল রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, আর এর জন্য সর্বপ্রথম ফন্দি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল। সে কারণেই শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা উত্তর পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসতে না দিয়ে প্রথমে তাদের নিকট নিয়ে গেেেলা এবং প্রথম তাবিজ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পরিবর্তন করে দিয়ে, গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এসবের পরিবর্তে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমাদের সংবিধান তারা প্রণয়ন করে দিলো।
আমাদের সংবিধান তারা করে দেওয়ার মানেই হলো আমাদের এ দেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তার সব চাবিকাঠি তাদের হাতেই নিয়ে নিল আর আঁতুর ঘরেই শেখ মুজিবুর রহমান এর মাধ্যমে নিজেদের পুতুল সরকার বানিয়ে নেয় এবং ছোট্ট একটা দেশ হলেও বিপুল জনসংখ্যার দেশটাকে বাজার হিসেবে দখল করে নিল, বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনাকে ছলে বলে কৌশলে ও অবৈধ পন্থায় ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে রেখে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করে নিল।
তাই আমাদের কৃষক ও কৃষিখাত উপেক্ষিত হলো চরমভাবে, ব্যবসায়ীদেরকে সুকৌশলে নির্ভর করতে বাধ্য করা হলো ভারতের উপরে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা মনে হয় যেন জ্ঞাতই ছিলনা পেঁয়াজ-আলুর মত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশ থেকে আমদানি করা যায়!
আমাদের দেশে দু’বছরে আগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন; আর দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ২৫ থেকে ২৬ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বছরের আর একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশের বাৎসরিক চাহিদা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ মে: টন আর বিগত ১ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। তাহলে মোটের উপর গবেষণা করলে দেখা যায় অন্য দেশ থেকে চার লাখ মেট্রিক টন এর বেশি আমদানি করার প্রয়োজন হয় না; কিন্তু ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কারণে ও আমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় ভারত থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন। ভারতীয় দাসী শেখ হাসিনা এমনভাবে ভারত তোসন নীতিতে মত্ত ছিল যে, ব্যবসায়ীদেরকে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতেই দেয়নি বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে।
আবার ভারত ঝোক বুঝে কোপ মেরে মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে আমাদের ভোক্তাদেরকে অধিক দামে কিনতে বাধ্য করত তদুপুরি দেশে যখন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তখন পেঁয়াজ পাঠিয়ে দিয়ে কৃষকদের বারোটা বাজিয়ে দেয় বিভিন্ন সময়! অন্যদিকে স্বৈরাচারী হাসিনার গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট মজুদ করে ভোক্তাদের উপর জুলুম করে বসত দফায় দফায় যার রেশ এখনো যায়নি এবং ভারতপুজারী হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা সে সিন্ডিকেটকে এখনো বহাল তবিয়তে রেখে দিয়ে সাধারণ মানুষকে শোষণ করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে।
স্বৈরাচারী ও ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনা দেশের কৃষকদেরকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পেঁয়াজ, আলু উৎপাদন এবং সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বছরের লাখ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট করে যেত আর এর এসব নষ্ট হওয়া ক্ষতিটা কালোবাজারি মজুদদাররা কৌশলে আদায় করে নিতো ভোক্তাদের তথা জনগণের পকেট থেকে।
আমরা ২০২১/২২ সনে একবার করোনার সময় লক্ষ্য করেছি ভারতের ষড়যন্ত্রে এদেশের নিরীহ মানুষ ৩০০/৪০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হয়েছিল আর শেখ হাসিনা তখন জাতির সাথে তামাশা করে বলেছিল, পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি রান্না করা যায়, আমরা পেঁয়াজ ছাড়াও তরকারি রান্না করি এবং খাই। ওই সময়ে ব্যবসায়ীরা নাজুক পরিস্থিতি অবলোকন করে মিশর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আনা শুরু করলে পরে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করে! এবছরের এক পরীক্ষায় আমাদের দেশের কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদেরকে দিয়ে গ্রীষ্মকালীন পাঁচ (৫) জাতের পেঁয়াজের বীজ পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায় নাসিক এম পি পিটি ও বিপ্লব জাতের দুটি পেঁয়াজের সফল উৎপাদন মিলে। পরীক্ষায় দেখা যায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের তুলনায় এ দুটি জাতের পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ২০ মণ বেশি উৎপাদন করা সম্ভব এবং তুলনামূলক আরো কম খরচ হয়। এসব কৃষকদের চাহিদা হলো তাদের এ দুটি জাতের পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ করতে পারলে পদ্মার চরে ও ফরিদপুরে পেঁয়াজের চাষ অনেক বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং আমদানির কোন প্রয়োজন হবে না; বরং পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করা যাবে। এ প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি সর্বপ্রথম সরকার অর্থাৎ যাঁরা ক্ষমতায় থাকবেন বা আছেন তাঁরা যদি ভারত পূজারি না হয়ে দেশ প্রেমিক হন তাহলে আমরা যা করতে পারি তা হল:
১। পেঁয়াজের জন্য ভারত নির্ভরতা বাদ দিতে হবে।
২। ভারতের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে সময় সময় যেসব নাটকের আয়োজন করা হয় সেগুলো মঞ্চস্থ করার দ্বার রুদ্ধ করতে হবে।
৩। প্রয়োজনে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে তবুও ভারত থেকে নয়।
৪। এমপিপিটি ও বিপ্লব জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহযোগিতা তথা নতুন বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৫। অনাবাদী কিংবা এক ফসলি জমিগুলোতে আরো উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ হাতে নিলে উৎপাদন চাহিদা পূরণ করে দেশের পেঁয়াজ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
আমরা যদি একটু খানি খেয়াল করি তাহলে দেখব আলু উৎপাদনে বর্তমানে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী। এফ, এ এর তথ্য অনুসারে গত এক বছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১০.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আরো মজার খবর হল বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের ১১টি দেশে আলু রপ্তানি হচ্ছে যা ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম করেছে; অন্যদিকে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যেও বাংলাদেশের আলু রপ্তানি হচ্ছে প্রতিবছর যথেষ্ট পরিমাণে এবং এটিকে আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা সম্ভব।
তাই বর্তমান সরকার ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় নিজেদেরকে মানসিকভাবে তৈরি করলে এবং সচেতন থাকলে, বিগত দিনের সরকার কর্তৃক তৈরি করা লুটেরা, মজুদদার ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করলে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের বিপ্লবে গণমানুষের যে আত্মত্যাগ এর মর্যাদা সমুন্নত করা যাবে এবং ভারতীয়দের আলু পেঁয়াজের নাটকের পরিসমাপ্তি করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings