ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে শপথ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ওবামা কেয়ার’ বাতিল।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ জারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এ কথা বলেছেন। এসব আদেশ মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচি
ট্রাম্প অভিবাসন নীতিকে তার প্রথম দিনের প্রধান অগ্রাধিকার বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু করবেন। নিউইয়র্কের এক সমাবেশে তিনি বলেন, প্রথম দিনেই অপরাধী অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, এটি বাস্তবায়ন করা যেমন কঠিন, তেমনি মানবিক দিক থেকেও বিতর্কিত।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের কথা বলেছেন। তার মতে, প্রথম দিনেই আমি এই অধিকার বাতিল করব। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান সংশোধন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা ব্যাপক আইনি বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা
ট্রাম্পের আরেকটি বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি হলো ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল হামলায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। তিনি বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ৯ মিনিটের মধ্যেই আমি এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। সমালোচকদের মতে, এ পদক্ষেপ আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তিনি দাবি করেছেন, পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। তারা আমাকে সম্মান করেন, যা বাইডেনের ক্ষেত্রে হয় না। তবে বিশেষজ্ঞরা এ প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়নযোগ্য মনে করছেন না।
শুল্ক আরোপ
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। তবে অর্থনীতিবিদেরা সতর্ক করেছেন, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জ্বালানি খাত উন্নয়ন
জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকার জ্বালানি খরচ কমাতে আরও বেশি তেল উত্তোলন করব। তবে পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, এটি জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করবে।
ট্রান্সজেন্ডার ও লিঙ্গ-সম্পর্কিত নীতি
ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ এবং লিঙ্গ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া নীতিমালা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এসব উদ্যোগ এলজিবিটিকিউ প্লাস সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
মেড-ইন-আমেরিকা উদ্যোগ
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মার্কিন গাড়ি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। তিনি বলেন, আমার নেতৃত্বে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্প আবার শীর্ষস্থানে যাবে।
উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ
প্রথম কর্মদিবসে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিগুলো উচ্চাভিলাসী এবং বিতর্কিত। তবে এগুলো বাস্তবায়নে তাকে ব্যাপক আইনি বাধা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে। অনেকেই বলছেন, এসব পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র : এনবিসি নিউজ
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings