২৯ ফেব্রুয়ারি – লিপ ইয়ারকে স্মরনীয় করে রাখতে এই দিনটিকেই তারা বেছে নিলেন বিয়ে করার জন্য। হয়ে গেল তাদের বিয়ে। স্বল্প সংখ্যক কাছের বন্ধু এবং আত্মীয়দের নিয়ে এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করা হয় ঢাকার একটি মিলনায়তনে।
ছোট পর্দার জুটি তাঁদের সেভাবে বলা যায় না। কারণ, পর্দায় নাটুকে জুটি পোক্ত হওয়ার আগেই বাস্তব জীবনে পাকাপাকিভাবে এক হয়ে গেলেন অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া ও অভিনেতা সৈয়দ জামান শাওন। বিয়ের পরপরই টয়া–শাওন জানালেন তাঁদের প্রেম ও বিয়ের গল্প।
চিরকুট নাটক থেকে শুরু!
কোনো প্রেমময় কথা লেখা চিরকুট নয়। বলছি চিরকুট নামের একটি নাটকের কথা। টয়া ও শাওনের কাছে আসার শুরু সেই চিরকুট–এর সেট থেকে। এর আগে ২০১৫ সালে নাইন অ্যান্ড আ হাফ নাটক থেকে এ দুজনের একসঙ্গে কাজ করা শুরু হয়। কিন্তু ভাব বিনিময়ের শুরুটা গত বছরের ঈদুল আজহার আগে আগে। চিরকুট নাটকটি ঈদুল আজহার জন্যই তৈরি হচ্ছিল। সেই যে প্রথম ভাব বিনিময়, সেদিনের কথা মনে করতেই টয়া বললেন, ‘শুটিংয়ে যাওয়ার আগে শুনেছিলাম ওর ডেঙ্গু জ্বর। এরপরও সেদিন ও আগে আগে শুটিংয়ে যায়। আমি পরে যোগ দিই। সন্ধ্যার দিকে একটা দৃশ্যের জন্য ছাদের ওপরের উঁচু জায়গায় আমাদের উঠতে হয়েছিল। সেখানে ওঠার পর আমাদের মেকআপ আর্টিস্ট আমার আর শাওনের একটা ভিডিও করে দেন। শাওন ওটা নিয়ে তাতে আমার পছন্দের একটা গান জুড়ে দেয়। আমার ওটা খুব ভাল্লাগে, মিউজিকটা আমার প্রিয় ছিল।’
ছবি দেওয়া–নেওয়া থেকে মন দেওয়া–নেওয়া!
এরপর সেই ভিডিও দেওয়া–নেওয়ার পর প্রায়ই শুটিংয়ে কাজের ফাঁকে তোলা মজার ছবি আর ভিডিও চালাচালি শুরু হয় তাঁদের মধ্যে। কোথাও কোথাও যে তাঁদের মধ্যে খুব মিলে যায়, তা বুঝতে শুরু করেন টয়া ও শাওন। তবে প্রেমটা কিন্তু তখনো হয়নি। ওই নাটকের শুটিং শেষ হলে টয়া তাঁর বন্ধুদের আড্ডায় আমন্ত্রণ জানান শাওনকে। শাওনও সাড়া দেন। কিন্তু টয়ার মনে তখনো প্রেমের অনুভূতি ছিল না। বরং তিনি তো তাঁর আরেক বন্ধুর ঘটক হয়ে শাওনকে যাচাই–বাছাই করছিলেন। টয়া হাসতে হাসতে বলেন, ‘বন্ধুদের মধ্যে আমরা সবাই বিয়ের উপযুক্ত। সবাই সবার জন্য পাত্র দেখছিলাম। আমি শাওনকে দেখছিলাম আমার এক বন্ধুর জন্য। তাই শুরুতে ওর সঙ্গে দেখা বা কথা হওয়াকে আলাদা মনে হয়নি।’
প্রেম প্রেম ভাব
‘ভালোবাসি’—এভাবে প্রেমের প্রস্তাব কেউ কাউকে দেননি। তবে প্রেম প্রেম ভাবটা দুজনই প্রায় একই সময়ে বুঝতে পেরেছেন। ঈদুল আজহার ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে টয়া ও শাওন কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সবাই মিলে ভালো কিছু সময় কাটাবেন, এই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কক্সবাজার গিয়ে শাওন ও টয়া দুজনেই এক অপ্রত্যাশিত অনুভূতির মুখোমুখি। দেখলেন বন্ধুদের আড্ডায় আর ঘোরাঘুরির কারণে শাওন ও টয়া একে অপরের সঙ্গে কথাই বলতে পারছেন না। দুজনই জানালেন, ওই সময়টা ছিল তাঁদের জন্য চরম বিরক্তিকর। তখনই একটু একটু বুঝতে শুরু করলেন একে অপরের সঙ্গে কাটানো নিজেদের সময়টা আরও আরও চাই তাঁদের।
হুট করে সিলেটে
কক্সবাজারে সময় না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচাতে সেখান থেকেই শাওন ও টয়া চলে গেলেন সিলেটে। কিন্তু সেখানেও ছিল কয়েকজন বন্ধু। তাই আবারও আড্ডার দুই প্রান্তে দুই জন, নেই নিজেদের কথা বলার সময়। পরিস্থিতির এই পরিহাসে টয়া ও শাওন রাগ করে থাকলেন একজন আরেকজনের ওপর। ঢাকায় ফিরে কথা নেই! কিন্তু দুরত্ব আর অভিমান বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। দুরত্বেই তাঁরা বুঝে গেলেন, প্রেমটা শুধু আর আবছা অনুভূতিতে আটকে নেই। সময় এসেছে একে আরও পাকাপোক্ত করার। শাওন বললেন, ‘বিয়ের কথাটা আমিই আগে তুলি। আমরা দুজনই প্রস্তুত ছিলাম বিয়ের জন্য।’ এরপরের অংশ আবার বলতে শুরু করলেন টয়া, ‘শাওন তাঁর মাকে আমার কথা বলে। ও বলেছিল, “আমি যদি টয়ার সঙ্গে প্রেম করি, কোনো সমস্যা হবে?” এ কথা শুনে সে সময় তিনি খুব মজা করে বলেছিলেন, “টয়া তোকে পাত্তা দিবে?” এরপর শাওন মায়ের সঙ্গে আমার দেখা করিয়ে দেয়। প্রথম দেখাতেই তিনি আমাকে পছন্দ করেন।’
অতঃপর বিয়ে…
শাওন ও টয়ার পরিচয় লম্বা সময়ের, তবে প্রেমের ব্যাপ্তি স্বল্প আর বিয়েটা তো হুটহাট। ২০২০ সালের অধিবর্ষে, অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি সেরে ফেলেন বিয়ের কাজ। এর আগে হয় মেহেদি ও হলুদের অনুষ্ঠান। বিয়ের পরপরই দুজনের গন্তব্য ছিল সিলেটে। সেখানে অল্প কয়েক দিনের অবসর। তারপর ফিরেই ৪ মার্চ থেকে আবার যে যার কাজে। আর কাজ শেষ হলেই নতুন সংসার গোছানোর ব্যস্ততা। চিরকুট দিয়ে শুরু হওয়া প্রেম পূর্ণ হলো লিপ ইয়ারে বিয়ের মধ্য দিয়ে।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!