দাবি (4/9)

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন নিম্নের দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছে:

সরকারি চাকরিতে কার্যকর বর্তমান কোটা পদ্ধতি বাতিল

অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ন্যায্য হারে কোটা প্রদান করা

কোটা সর্বোচ্চ ৫% পর্যায়ে নামিয়ে সংসদে নতুন আইন পাশ করা

নয় দফা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখান করে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন। সাথে সাথে দেশকে স্থিতিশীল করতে নয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। পরবর্তীতে তারা এই নয় দফা দাবিতে ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। নয় দফা দাবিগুলো হলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার এবং সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র-নাগরিক হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেশে ডিজিটাল ক্র‍্যাকডাউন করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে পদত্যাগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শহীদ শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে ড্রাগ এডিক্ট বলে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এবং আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে পদত্যাগ করতে হবে।

ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র-নাগরিক শহিদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টরদেরকে পদত্যাগ করতে হবে।

যে পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাব ও সেনা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যেসব সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদেরকে নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিকদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকে আটক করে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।

দেশব্যাপী যেসকল ছাত্র-নাগরিক শহীদ এবং আহত হয়েছে তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনসহ সব দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে

অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিয়ে সারাদেশের সমস্ত ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সোয়াট এবং আর্মি তুলে নিতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে। ইতোমধ্যে গণগ্রেপ্তার ও পুলিশি হয়রানির শিকার সমন্বয়কবৃন্দ ও ছাত্র-নাগরিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ও সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৩০ জুলাই সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো[

জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা এবং তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া;

সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা; নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া;

গায়েবি মামলা ও ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ করা ও তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পক্ষপাতদুষ্ট মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করা থেকে বিরত থাকা;

ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে মুক্তি দেওয়া, সাধারণ নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে দূরে থাকা;

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা থেকে বিরত থাকা;

যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে তুলে নিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বা থানায় হাজির করা থেকে বিরত থাকা;

ব্যাবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গনসহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করা;

লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা, ক্যাম্পাসে গণরুম ও ‘গেস্টরুম কালচার’ ও র‌্যাগিং বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া, তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে সব ক্যাম্পাসে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা; এবং

ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

এক দফা

আরও দেখুন: এক দফা আন্দোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র-নাগরিক ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমবেত হন। বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তরুণ যুবকরা শহীদ মিনার জড়ো হতে থাকেন। এসময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায় বয়স্ক নাগরিকদের। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে একদফা দাবি ঘোষণা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম[৪১]:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করতে হবে।

অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ[৪২]:

কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা দেবেন না।

বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।

সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না।

সব সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।

বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।

দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টস কর্মী ভাইবোনেরা কাজে যাবেন না।

গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।

জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংক খোলা থাকবে।

পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।

দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।

বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।

আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।

বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণী-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন-ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহণ, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।

এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

সংগঠন (3/9)

ঘটনাপ্রবাহ (5/9)