সংলাপ ও সুপ্রিম কোর্টের রায় (7/9)

সংলাপ ও সুপ্রিম কোর্টের রায়

২০ – ২২ জুলাই

২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। সেনাবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউর অংশ হিসেবে টহল দিতে দেখা যায়। ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেই বৈঠক ও বৈঠকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এইসব সংঘর্ষে দুইজন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন, অন্তত ৯১ জন আহত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলামকে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়।

২১ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল ও সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় ও পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।এদিন ঢাকায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে র‍্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। যাত্রাবাড়ীতে সারাদিন ধরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়। সেতু ভবন ভাঙ্গচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

২২ জুলাই পঞ্চম দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল ও তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। এক নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি আরও একদিন (মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪) বাড়ানো হয়। দুপুরের দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু ব্যবসায়ী বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবিরকে দায়ী করেন ও ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার কথা জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন।

আন্দোলন স্থগিত ও গণগ্রেফতার

২৩ – ২৮ জুলাই

২৩ জুলাই ষষ্ঠ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। এছাড়া চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

২৪ জুলাই সীমিত পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে তা শিথিল পর্যায়ে ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয় ও নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭ হয়। শিক্ষার্থীদের মতে নিহতের সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি যা ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় জানা যায় নি। ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করে। বিক্ষোভের সময় সেনা মোতায়েন পর জাতিসংঘের লোগো সংবলিত যান ব্যবহৃত হলে জাতিসংঘ এই নিয়ে উদ্বেগ জানায়। ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকার পর ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। ২৪ জুলাই রাত পর্যন্ত আরও ৪ জনসহ মোট ২০১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকেরা।

২৫ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ডে ধীরগতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। সরকার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখে, এদিন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়।

২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটককে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণ করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে জাতিসংঘ।

২৭ জুলাই তিন সমন্বয়ককে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে তাঁদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো কেন, সেই প্রশ্ন তুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। তিন শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিতে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যান এই শিক্ষকেরা। যদিও শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে ডিবিপ্রধান অস্বীকৃতি জানান। আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে অভিযান চালানো হয়। এদিনও কারফিউ চলমান থাকে। তবে এই কারফিউ কিছু সময় শিথিল থাকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮শে জুলাই থেকে ৩০শে জুলাই পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি ছয় ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত জানায়। রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় গোয়েন্দা শাখা। পরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর পুলিশি নির্যাতনের কথা জানান নুরের স্ত্রী।

২৮ জুলাই ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।বেলা ৩টা থেকে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ রাখা হয়।[৮৩] বিকেল ৪টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সমাবেশ-বিক্ষোভ করে। তারা অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মুক্তির দাবি জানায়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনার একটি মামলায় বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে আটক করা ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তাকে সাত দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতে মি. ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে দাবির স্বপক্ষে বয়স প্রমাণক দাখিল করে আদালত তার রিমান্ড স্থগিত করেন। ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের কয়েকজনের পরিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গেলেও তাদেরকে পরিবারের সাথে দেখা করতে দেয় নি। রাত ১০টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু পুলিশে আটক হওয়া অবস্থায় পুলিশের অফিসে বসেই বাকি সমন্বয়কারীদের সাথে যোগাযোগ না করে এমন ঘোষণা দেয়ায় এই ঘোষণাকে সরকার ও পুলিশের চাপে দেয়া হয়েছে বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাকিরা। রাত ১১টার দিকে সমন্বয়কদের জিম্মি ও নির্যাতন করে বিবৃতি দেয়ানোর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ জুলাই আবারও রাজপথে আসার ঘোষণা দেয় দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে, দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দেয়, তারা ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে জানায়। ২৮ জুলাই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল অন্তত ২১১। ঢাকায় আহতের সংখ্যা অন্তত ৭ হাজার। অধিকাংশ আহতই গুলিবিদ্ধ এবং বিশেষত মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ। রাত পর্যন্ত ১২ দিনে দেশের ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার করা হয় ও অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

পুনঃসূচনা

২৯ জুলাই – ৩ আগস্ট

২৯ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয় বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক। প্রথম আলোর রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী। বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র (বুলেট বা গুলি) ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাড্ডা, ইসিবিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আবারও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে কিছু শিক্ষার্থী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ অনেক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বাসা থেকে তুলে নেয়ার পরবর্তী ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তবে এর আগে আরিফ সোহেলকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে তা অস্বীকার করেন ঢাকা উত্তর ডিবি কার্যালয়ের ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানোর ঘটনা নিরেট মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক ও সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে এরূপ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ডিবি হেফাজতে নেয়া সমন্বয়কারীদের ছেড়ে দেয়া ও শিক্ষার্থীদের গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে সোমবার দুপুরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দুইজন আইনজীবী। দশম দিনের মতো বাংলাদেশে কারফিউ অব্যাহত থাকে, যদিও দিনের বেলায় শিথিল থাকার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। ইন্টারনেট চালু হলেও হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো অনেক সেবা বন্ধ রাখা হয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ৩০ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এটি প্রত্যাখান করে ৩০ জুলাই লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অনেক বাংলাদেশি সরকারি শোকের কালো রঙ প্রত্যাখ্যান করে লাল রঙ ধারণ করেন এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালান

৩০ জুলাই সরকার ঘোষিত শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে শোকের কালো রং বাদ দিয়ে আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সমর্থন জানান। সকাল সাড়ে ১১টায় ৯ দফা দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে সঙ্গে সঙ্গে বাধা দেয় ও ৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দুপুর ১২টায় ৬ সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে আলটিমেটাম দেয় ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’। দুপুর সাড়ে ১২টায় মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। দুপুরে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুখে লাল কাপড় বেঁধে র‍্যালি ও সমাবেশ করেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ। বিকেল ৩টায় উদীচীসহ ৩১টি সংগঠনের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করতে বের হয় শিক্ষার্থীরা। তাদের উপর সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

৩১ জুলাই হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ৩১ জুলাই বুধবার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রামে সকাল ১০টার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর পুলিশের বাধা ভেঙে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরেও প্রবেশ করে। বিকেল ৩টায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেওয়া হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

১৭ জুলাই (6/9)

শেখ হাসিনা পদত্যাগ (8/9)