in

কলকাতায় দুইবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর হিজাব খুলে হেনস্তা

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বারবার উত্তেজনা ছড়াচ্ছে নয়াদিল্লি। অথচ খোদ ভারতেই একের পর এক মুসলিম, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষদের নির্যাতন, হেনস্তা ও অধিকার হরণের ঘটনা ঘটছে। এমনকি মুসলিম ফোবিয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এখন বিহার, যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও এক সময়ের বিজেপি শাসিত কর্নাটকের কাতারে চলে যাচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের ইসলামো ফোবিয়া ক্রমেই বাড়ছে। এবার কলকাতায় ‘প্রগতিশীল’ বলে পরিচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটল হিজাব নিয়ে হেনস্তার ঘটনা। যাদবপুরে কনভোকেশনে দেখা যায়, একদল ছাত্রী পোস্টার ধরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। পোস্টারে লেখা ‘মাই বডি মাই চয়েস’, ‘সে নো টু ইসলামো ফোবিয়া’। ওই দিন ইংরেজি পরীক্ষার সময় দুই কক্ষে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

জানা গেছে, এক শিক্ষার্থী গলায় একটি হেডফোন ঝোলানো অবস্থায় পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তাকে প্রশ্ন করায় তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান বা এইচওডিকে বলেন, ভুলবশত হেডফোনটি নিয়ে এসেছিলেন। এইচওডি হেডফোনটি নিয়ে নেন। এরপরই এইচওডি সারা ক্লাসে নজর বুলিয়ে বিশেষ তল্লাশির জন্য মাত্র একজন ছাত্রীকে বেছে নেন। সম্ভবত ওই ছাত্রী হিজাব পরিধান করায় এইচওডি শাশ্বতী হালদারের বিশেষ লক্ষ্যে পরিণত হন।

হিজাবধারী ওই ছাত্রী বারবার বলেন, তিনি কোনো হেডফোন নিয়ে আসেননি। তাতে কর্ণপাত করেননি ওই শিক্ষক। শাশ্বতী হালদার ওই ছাত্রীকে আদেশ করেন ভরা কক্ষে হিজাব খুলে ফেলতে। তখন ওই শিক্ষার্থী খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যান। তার পক্ষে এগিয়ে আসেন ক্লাসের অন্য ছাত্রছাত্রীরা। তারা শিক্ষিকাকে বলেন, হিজাব খুলতে হলে আপনি অন্য কোনো কক্ষে বা ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলে ভালো হবে। এইচওডি খানিকটা গররাজি অবস্থায় ওই ছাত্রীকে একটি রুমে নিয়ে যান। তার কঠোর তল্লাশি হলেও কোনো হেডফোন বা নিষিদ্ধ কোনো সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি। পরে শিক্ষিকা ছাত্রীকে ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন।

অন্য ক্লাসে হিজাবধারী যে ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তার অভিজ্ঞতা আরো খারাপ। শিক্ষিকা শাশ্বতী তাকে একটি ওয়াশ রুমে নিয়ে যান। হিজাব খুলে তার কাছে হেডফোন ইত্যাদি আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। এরপর এইচওডি ওই ছাত্রীকে অপমান এবং অস্বস্তিকর নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। যেমন, তোমরা কি খুব গরমেও এভাবে অতিরিক্ত কাপড় পরে থাকো? গোসল করার সময়ও কি তোমরা এভাবেই হিজাব পরে থাকো? ইত্যাদি। এরপর ওই ছাত্রীকেও পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে বলা হয়।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, এভাবে হয়রানি ও হেনস্তামূলক তল্লাশির কারণে আমাদের ১৫-২০ মিনিট সময় নষ্ট হয়। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নিয়ে এইচওডির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি পাত্তা দেননি। তিনি আমাদের অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করেননি।

ভুক্তভোগী আরেক ছাত্রী বলেন, আমরা যাদবপুরে আমাদের সহপাঠীদের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে নিজেরাই ভিসির কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা অবাক হচ্ছি যে, অনেকে কানঢাকা হুড এবং গলাবন্ধ সোয়েটার, কোট ইত্যাদি পরে এসেছিলেন। তাদের কাউকে তল্লাশি না করে শুধু হিজাব পরিহিতা দুই ছাত্রীকে আলাদাভাবে তল্লাশি করা হলো। এভাবে তাদের মুসলিম হিসেবে চিহ্নিতকরণ ও লজ্জা দেওয়া খুবই অনুচিত কাজ হয়েছে। এটা যাদবপুরের ট্র্যাডিশনের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এর আগে সম্প্রতি বিজেপির সহযোগী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সরকারি সভামঞ্চে হিজাব পরিহিত এক চিকিৎসক তরুণীর হিজাব টেনে খুলে ফেলেন। ওই তরুণী প্রতিবাদস্বরূপ এবং অপমান বোধ করে সরকারি চাকরিই নেননি।

নীতীশের সহকর্মী এক মন্ত্রী বলেছেন, আরে বাবা, শুধু তো হিজাব খুলে দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি মেয়েটির শরীরের এখানে ওখানে হাত বোলাতেন, তাহলে আপনারা কী করতেন?’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতে এখন এভাবেই ট্রিট করা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

তারেক রহমানের ফেরা ও খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দেশব্যাপী দোয়া কর্মসূ

গাজায় বিধ্বস্ত ভবন থেকে আরো ৯৪ মরদেহ উদ্ধার