৫ নভেম্বর ২০২৪ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হন। এর ঠিক এক বছরের মাথায় গত ৪ নভেম্বর চারটি নির্বাচনে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি হেরেছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বছর পূর্তিতে ভোটারদের অসন্তোষের ইঙ্গিত। তাঁর জন্য একটি ধাক্কাও।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের আদর্শগত বৈচিত্র্য থাকার পরও তারা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের নির্বাচনী প্রচারণার লক্ষ্য ছিল ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি তুলে ধরা এবং ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা। খবর সিএনএন ও রয়টার্সের।
ডেমোক্রেটিক পার্টির নিউইয়র্কের প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-করতেজ এ ফলকে পুরো দেশের জন্য বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমেরিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে স্তম্ভিত। এই জয় ডেমোক্রেটিক দলের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে।
আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন। এর প্রাথমিক পর্ব ঘনিয়ে আসছে। এ ছাড়া ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের মনোভাব বোঝার জন্য এই জয়-পরাজয় গুরুত্বপূর্ণ।
ভার্জিনিয়া এবং নিউজার্সি
ভার্জিনিয়ায় মধ্যপন্থি সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। তিনি রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসোম আর্ল-সিয়ার্সকে পরাজিত করেন। লাউডন কাউন্টিতে স্প্যানবার্গার ৬৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। এটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা স্প্যানবার্গার প্রায় ৫ শতাংশ এগিয়ে আছেন ২০১৭ সালের ডেমোক্র্যাট বিজয়ী রাল্ফ নর্থামের চেয়ে। এই জয় মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ওপর প্রভাব ফেলার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে, যেসব পরিবারে ফেডারেল কর্মী বা ঠিকাদার আছেন, তাদের ৬১ শতাংশ স্প্যানবার্গারকে সমর্থন দিয়েছেন। এ বিজয় অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাপ প্রার্থী জে জোন্সকেও জয় এনে দিতে সাহায্য করে।
এ নির্বাচনের মাধ্যমে ভার্জিনিয়ার ইতিহাসে প্রথম মহিলা গভর্নর পেতে যাচ্ছে। স্প্যানবার্গার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি বিশেষ করে রাজ্যের নারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, নিউজার্সিতে দলীয় প্রতিনিধি মিকি শেরিল জয়ী হয়েছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক সিয়াটারোলির জোটকে পরাস্ত করেছেন। নিউজার্সিতে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটারের সংখ্যা রিপাবলিকানদের চেয়ে আট লাখেরও বেশি। এটি ট্রাম্পবিরোধী ডেমোক্র্যাট ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছে। সিয়াটারেলি রিপাবলিকান পার্টি এবং ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েও নির্বাচনে হেরেছেন। সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে, শেরিল লাতিন আমেরিকান বংশোদ্ভূত ভোটারদের ৬৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ সমর্থন পান। তিনি স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে সাত পয়েন্টের ব্যবধানে এবং মধ্যপন্থিদের মধ্যে ৩৯ থেকে ৫৬ শতাংশ ব্যবধানে জয়ী হন। সিয়াটারেলি শুল্ককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে করা ভোটারদের মধ্যে জয়ী হন। রাজ্যের অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা ভোটারদের ৬১ শতাংশ শেরিলকে সমর্থন করেন।
নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া
নিউইয়র্ক সিটিতে জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে (ট্রাম্প সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী) পরাজিত করেন। মামদানির মাধ্যমে মূলত ব্যয় সাশ্রয় নীতি এবং ভোটারদের কাছ থেকে নতুন মুখের জয় ঘটেছে। ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী থাকার পরও কুওমোকে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদি মামদানি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন, তাহলে নিউইয়র্ক সিটি অন্যান্য শহরের জন্য মডেল হতে পারে। শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি সাধারণ নাগরিকের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররা একটি আসন পুনর্বিন্যাসে অনুমোদন দিয়েছেন। এই বিজয় আগামী বছর হাউসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই প্রচেষ্টার মুখ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছেন। বিশ্লেষকরা জানান, এই বিজয় নিউসমের ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জয়
পেনসিলভানিয়ায় ডেমোক্রেটিক স্টেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা ভোটে জিতে বহাল থাকছেন। এর মাধ্যমে রাজ্যের উচ্চ আদালতে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকল। এ ছাড়া ভার্জিনিয়া হাউস অব ডেলিগেটসে ডেমোক্র্যাটরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ানোর পথে রয়েছে। এটি হলে সাংবিধানিক সংশোধনী আনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!



GIPHY App Key not set. Please check settings