in

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বাজেট ৫০ শতাংশ কমানোর নতুন পরিকল

বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব ও প্রভাব এখন এক অনিশ্চিত মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বাজেট ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার এক উচ্চাভিলাষী ও বিতর্কিত প্রস্তাব সামনে এসেছে, যা বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক শান্তি, মানবিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনা শুধু ব্যয় হ্রাস নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের বহির্বিশ্বে ভূমিকা পুনঃসংজ্ঞায়নের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

 

নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্টসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেট ২৬ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ২৮.৪ বিলিয়নে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বাজেট কমানোর ফলে জাতিসংঘ ও ন্যাটোসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য তহবিল বাতিল করা হবে। সেইসঙ্গে ফুলব্রাইট স্কলারশিপসহ শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও শান্তিরক্ষা কর্মসূচির বাজেটও কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এই বছরের অক্টোবর থেকে তা কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারি দপ্তরগুলোকে বাজেট পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

এই পরিকল্পনার আওতায় বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতি নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনার প্রস্তাব এসেছে। অন্তত ১০টি দূতাবাস ও ১৭টি কনস্যুলেট বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইরিত্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, দক্ষিণ সুদান, মাল্টা, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও কানাডার কনস্যুলেটসমূহ। কিছু কনস্যুলেট আকারে ছোট করে সেখানে ‘ন্যূনতম স্থানীয় সহায়তা নিয়ে সীমিত কূটনীতি’ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইউনিসেফ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) মতো প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনগুলোকে দূতাবাসে একীভূত করার প্রস্তাবও রয়েছে।

 

বাজেট কাটছাঁটের আওতায় কেবল কূটনীতি নয়, মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ প্রতিরোধ, শিশুদের টিকা সরবরাহ এবং মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব রয়েছে। মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিকে একীভূত করে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা একে কার্যত বিলুপ্ত করে দেবে। মার্কিন ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক ও বেপরোয়া’ আখ্যা দিয়েছে, এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল এটিকে ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য বিশাল উপহার’ বলেও মন্তব্য করেছেন।

 

এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে কংগ্রেসের হাতে। যদিও সেখানে রিপাবলিকানদের প্রাধান্য রয়েছে, কিন্তু ডেমোক্রেটদের সহযোগিতা ছাড়া এটি পাস সম্ভব নয়। এখনো পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে, যা মানবিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলবে। এই প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্র নীতির দিকনির্দেশনা। তথ্যসূত্র : বাসস

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

এপ্রিলের প্রথম ১২ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার!

নতুন পারমাণবিক সাফল্য উন্মোচন করলো ইরান!