in

রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে না ট্রাইব্যুনাল!

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’–এর খসড়ায় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশের যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে আরও কিছু সংশোধনী এনে করা অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে অফিস করেন।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত চাইলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারবেন। সেখানে (খসড়া) আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাঁরা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।

বুধবারে (২০ নভেম্বর)-এর  সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’–এর খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বেঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তবে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে আমরা যে অধ্যাদেশের সংশোধনী করেছিলাম, সেখানে সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, কোনো সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি মনে করে শাস্তি দেওয়া দরকার, তাহলে ট্রাইব্যুনাল শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করতে পারবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে।

বুধকার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় বলা হয়েছে, ‘আমরা এই বিচারকে অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন এলে এই আইনকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা একদম স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারটি করতে চাই। সে জন্য এই বিধান বাতিল করা হয়েছে।’

আসিফ নজরুল বলেন, তাঁরা অনুভব করেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, যদি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে সমাজে, তাহলে অন্যান্য আইন রয়েছে। সেসব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে, নির্বাচনী আইনে রয়েছে, ‘দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’–এ রয়েছে। কাজেই এখানে [‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ] এই বিধানটি নেই দেখে জনমতের প্রতি, জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ থাকল না এটা নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকল না, কিন্তু দেশে প্রচলিত অন্যান্য আইন রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে…সেটা পরে বিবেচনা করা হবে।

এর আগে বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেলের বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা-সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তার তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে সংশোধনীর খসড়াটি করা হয়েছে।

গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচারপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার