in

আইএমএফের কাছে ৮৬ দেশের ১৬২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ

১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেটন উডস সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয় আইএমএফ। যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এ সংস্থার জন্ম। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯১।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। এবারের সভায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল সদস্য দেশগুলোর ঋণ পরিস্থিতি। সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৬টি দেশ মিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ডলার (এসডিআর ১১৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন) ঋণী। এর মধ্যে শীর্ষ তিন দেশই মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকের দায়ভার বহন করছে।

সবচেয়ে বেশি ঋণী দেশ হলো আর্জেন্টিনা, যার বকেয়া ঋণ এসডিআর ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউক্রেন, যার ঋণ এসডিআর ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিশর, যার ঋণ এসডিআর ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এই তিন দেশ মিলেই আইএমএফের মোট বকেয়া ঋণের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী।

আর্জেন্টিনা আইএমএফের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা দেশ। অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দেশটি বারবার আইএমএফের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা ৫৭ বিলিয়ন ডলারের একটি রেকর্ড ঋণ নেয়, যা আইএমএফের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। চলতি বছর এপ্রিলে দেশটি আরো ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা কর্মসূচি পায়। এছাড়া ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন আর্জেন্টিনার অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে ২০ বিলিয়ন ডলারের, ডলার-পেসো বিনিময় সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে।

আইএমএফর দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা দেশ ইউক্রেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালে আইএমএফ ইউক্রেনের জন্য ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের চার বছর মেয়াদি ঋণ অনুমোদন করে, যা যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারি ব্যয় মেটাতে সহায়তা করছে। এ পর্যন্ত ইউক্রেন এই কর্মসূচির আওতায় ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতির কারণে মিশরও বারবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। ২০১৬ সালে দেশটি ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচি পায়, যার লক্ষ্য ছিল মুদ্রা বিনিময় হার সমন্বয়, ভর্তুকি কমানো ও কর সংস্কার করা। ২০২৫ সালের মার্চে আইএমএফ মিশরকে তাদের ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরো ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ছাড় দেয়। এই সহায়তার ফলে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ ঋণগ্রহীতা দেশ মিলে মোট ঋণের ৭৩ শতাংশ বহন করছে। তবে দেশগুলোর অর্থনীতির আকার অনুযায়ী তুলনা করলে সুরিনাম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আর্জেন্টিনা, বার্বাডোস ও গাম্বিয়া—এই দেশগুলো তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় আইএমএফের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী।

১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেটন উডস সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয় আইএমএফ। যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এ সংস্থার জন্ম। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯১। সংস্থাটি সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জরুরি অবস্থায় ঋণ দেয়। সেইসঙ্গে প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সংস্কার ও নীতি-পরামর্শ প্রদান করে। বর্তমানে আইএমএফের মোট ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।

বিশ্বের ৮৬টি দেশ বর্তমানে আইএমএফের কাছে ঋণী। যদিও আইএমএফের ঋণ অনেক দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে, তবুও এর কঠোর শর্ত ও ব্যয় সংকোচন নীতি সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তি কষ্ট ডেকে আনছে বলে সমালোচনা রয়েছে।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

রাজধানীর সূত্রাপুরে দিনদুপুরে সন্ত্রাসীর গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা সোমবার