in

গাজা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করল যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে গতকাল সোমবার একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন’ আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরাইল ও হামাসের জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ঘোষণাপত্রটি স্বাক্ষর হয়।

মিশরের শারম আল-শেখ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

ইসরাইলে ঝটিকা সফরে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিশরে যান। সেখানে তিনি এবং মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতারা গাজা চুক্তির জিম্মাদার হিসেবে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।

শার্ম আল-শেখের রিসোর্টে ট্রাম্প বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, এটি বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন।

ট্রাম্প স্বাক্ষর করার আগে দু’বার ‘এটি টিকে থাকবে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নথিতে নিয়ম-কানুন ও আরো অনেক কিছু স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।

গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল হামাস উপত্যকায় দুই বছর ধরে তাদের কাছে জিম্মি থাকা ইসরাইলিদের সর্বশেষ ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে।

ইসরাইলের কারা বিভাগ জানিয়েছে, এর বিনিময়ে ইসরাইল তাদের কারাগারে থাকা ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

ইসরাইলি পার্লামেন্টে উপস্থিত হলে দীর্ঘক্ষণ ধরে করতালির মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে ভাষণে ট্রাম্প আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ৭ অক্টোবর (২০২৩) থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়েছিল। এই যুদ্ধের ভার বহন করা কেবল গর্বিত কোনো জাতি ও বিশ্বস্ত জনগণই সহ্য করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এই ভূখণ্ডের পরিবারগুলোতে বছরের পর বছর ধরে সত্যিকারের শান্তিময় একটি দিনও আসেনি। শুধু ইসরাইলিদের জন্যই নয়, ফিলিস্তিনিদের এবং আরো অনেকের জন্য দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্নের অবশেষে অবসান ঘটেছে।

জিম্মি পরিবারগুলোর সমর্থনে তেল আবিবে জমায়েত বিপুল সংখ্যক লোকজন জিম্মি মুক্তির খবরে উল্লাস করেছে, অনেকে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েছে এবং সমবেতভাবে গানও গেয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দিদের বহনকারী বাসগুলো পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানাতে জনতা ভীড় জমায়। এসময় অনেকে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেয়।

গাজার খান ইউনিসে বন্দিদের বহনকারী ধীর গতির রেড ক্রস বাসগুলো পৌঁছালে অপেক্ষমাণ স্বজনরা তাদের প্রিয়জনদের উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে স্বাগত জানাতে শুরু করে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একাধিক পোস্টে জিম্মিদের ফিরে আসায় স্বাগত জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ২৭ জনের মৃতদেহ এবং এর আগে গাজায় সংঘাতের সময় ২০১৪ সালে নিহত একজন সৈন্যের দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।

ইসরাইল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাস কর্তৃক রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা দুই বন্দির মৃতদেহ পেয়েছে এবং তারা এখনো আরো দু’জনের দেহাবশেষ ফেরত পাওয়ার আশা করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ৪৭ জন ছাড়া বাকি সব জিম্মিকে এর আগের যুদ্ধবিরতিতে মুক্তি দেওয়া হয়।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুতে সেখানকার মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তবে, যুদ্ধের ফলে বেশিরভাগ অঞ্চলই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া ২৫ বছর বয়সী ইউসুফ আফানা খান ইউনিসে এএফপিকে বলেন, সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো-আমার পুরো পরিবার আমাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছে। আমি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর অন্যতম এসব দিন।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য হলো, গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় তার ভূমিকা উদযাপন করা। তবে, এখনো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে।

সম্ভাব্য বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে— হামাসের নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি ও বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি না পাওয়া।

ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গাজার জন্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা যুদ্ধবিরতি আনতে সহায়তা করে।

হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম সোমবার ট্রাম্প ও গাজা চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের ‘ইসরাইলের আচরণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার এবং তাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুনরায় শুরু না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানান।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরাইলের অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

তথ্যটি বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে ইঙ্গিত দেয় যে-নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও ফল রপ্তানিতে সহায়তার আশ্বাস

স্বর্ণের ঊর্ধ্বগতি থামছেই না, ২২ ক্যারেটের ভরি ২ লাখ ১৬ হাজার!