ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের চার মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে রাজধানীর দুই হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা হয় আন্দোলনে আহতদের সার্বিক অবস্থা। আহত দেড় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা চলছে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। এসব রোগীর একটি অংশের এখনো শরীর থেকে গুলি বের করা যায়নি।
কারো কারো ভাঙা হাড়ের মেরামত চলছে। কেউ কেউ গুলির ক্ষত শুকিয়ে এখন প্রায় সুস্থ, তবু হাসপাতাল ছাড়ছেন না। তারা মনে করছেন, হাসপাতাল ছাড়লে সরকারি সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হতে পারেন। গতকাল বুধবার এই দুই হাসপাতালে ঘুরে অন্তত ২০ জন রোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
তারা প্রত্যেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। তারা মনে করেন, সরকার তাদের প্রতি উদাসীন। তাদের একজন নোয়াখালীর কবিরহাটের সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের চার মাস পার হয়েছে।
নির্বাচন দিয়ে তারা বিদায় নেবেন, কিন্তু আমাদের কী হবে?’ তিনি পঙ্গু হাসপাতালের বি ওয়ার্ডে ৪০ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। তার শরীরে লাগা ৯টি গুলির ছয়টি বের করা গেলেও তিনটি এখনো রয়ে গেছে। এখন তিনি প্রায় পঙ্গু। তিনি গত ৪ আগস্ট দুপুরে ফেনীর মহিপালে গুলিবিদ্ধ হন। পরিবারে এক বোন ছাড়া আর কেউ নেই।
সাইফুল জানান, শরীর থেকে গুলি বের করলে তিনি মারা যেতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকে অপারেশন হচ্ছে না তার। সাইফুলের পাশের শয্যায় ভর্তি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আহম্মদের ভাষ্য হলো, হাসপাতালের বিনা মূল্যে চিকিৎসার বাইরে তাদের নিয়ে কোনো ভাবনা সরকারের নেই। এ সময় পাশের শয্যা থেকে উঠে এসে নেসার উদ্দিন এমিলি বলেন, ‘আমি তো পঙ্গু। আমার দুই সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে?’
হাসপাতালটিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় বিশেষ দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক ডা. মো. বদিউজ্জামান জানান, আহতদের মধ্যে বর্তমানে ভর্তি রোগী ৮১ জন। মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৫০ জন। এসব রোগীর মধ্যে পা হারিয়েছেন ১৭ জন এবং হাত হারিয়েছেন চারজন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন।
তিনি বলেন, ‘আহতদের অনেকে প্রায় সুস্থ, উনারা চাইলে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। কিন্তু উনারা কোনো কারণে হয়তো যেতে চাচ্ছেন না। এর বাইরে যারা ভর্তি তাদের একাধিক অপারেশন প্রয়োজন। কারো কারো হাড় জোড়া লাগানোর কাজ চলছে। এতে ছয় মাস থেকে এক বছর লাগতে পারে। তাদের হাসপাতালে থাকা জরুরি নয়।’
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings