১২ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে। ব্যবসায়ীরা গভর্নরকে তাদের অসহায়ত্ব ও হতাশার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, সরকার সহায়তা না করলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ওই বৈঠকের ১০ দিন পর ব্যবসায়ী দলনেতা ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমরা গভর্নরকে বলেই দিয়ে এসেছি, আমাদের সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে এক্সিট দিয়ে দিতে। বাঁচিয়ে রাখার জন্য উৎপাদন খাতের দিকে নজর দেওয়া উচিত সরকারের। সহায়তা না করলে ব্যবসা বন্ধ হবে। তাই আমরা সেফ এক্সিট পলিসি
দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। শুধু পারভেজ একা নন, এমন হতাশায় সব ব্যবসায়ী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না ঘটলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের শিল্প কারখানা। মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি। বাড়বে বেকারত্ব।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমে গেছে। ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশের বেশি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। নতুন গ্যাস সংযোগে গ্যাসের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রেসক্রিপশনে বিভিন্ন পণ্যের ওপর কর/মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বিসিআই সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান কীভাবে ধরে রাখা যায়। তার জন্য উৎপাদন খাত কীভাবে সারভাইব করবে এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে সেদিকে তাকাতে হবে। দেশি শিল্পকে বাঁচাতে হলে দেশে ভোক্তার প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এখন সরকার যদি মনে করে শিল্প দরকার তাহলে এগুলো করবে। আর সরকার যদি মনে করে শিল্প দরকার নেই তাহলে কিছুই করবে না। কারণ, ওই খানে তো আমরা কিছু করতে পারব না। শিল্পকে কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক করে সক্ষমতা ও কর্মসংস্থান ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। যার প্রভাব পড়েছে সিমেন্ট, রড, ইট বালিতে। অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট শিল্প সক্ষমতার ৪০ শতাংশের কম উৎপাদন করছে। পর্যায়ক্রমে সব শিল্পই এ রকম হবে। তার মানে আস্তে আস্তে শিল্প দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমরা এজন্য গভর্নরকে বলেই দিয়ে এসেছি আমাদের সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে এক্সিট দিয়ে দিতে।
বিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। তাই আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে উৎপাদন খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সে বিষয়ে সরকারকে একটি প্রস্তাবনা দেবেন ব্যবসায়ীরা। কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি, ব্যাংক, এনবিআর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শ্রমিক ইস্যু আছে। একটি পেপার তৈরি করা হচ্ছে সব খাত মিলে। এতে বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বিকেএমইএ, ওষুধ শিল্প, স্টিল শিল্প, অটোমোবাইল, সিরামিক বেভারেজ ও এগ্রো খাত নিয়ে বিস্তারিত থাকবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সরকার ভ্যাট, ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানির দাম বেড়েছে। ঋণের সুদ ১৫ শতাংশের বেশি। সরকার সবকিছুই নিজের মতো করছে। অংশীজনদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করছে না। যাদের জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে টিকে থাকবে সেটা চিন্তা করা হয়নি। ব্যবসায়ীদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি, তারা এটার ভার বহন করতে পারবে কি না। সরকার যদি ধরে নেয় ব্যবসায়ীরা এই বাড়তি দর দিতে পারবে তাহলে আমরা ফেইল করব। শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়া শুরু হয়েছে, আরও হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। ব্যবসায়ীরা এখন যে সমস্যায় আছে সেটা মোকাবিলা করার জন্য নীতি সহায়তা না দেন তাহলে ক্ষতিটা আরও বড় হবে।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings