নির্বাচনী আচরণবিধি: প্রার্থীরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না?
রাজধানীর দুই সিটি নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। সারাদিন প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু প্রধান দুই দলের প্রার্থীরাই আচরণবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। আর নির্বাচন কমিশনও এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে। আর প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের যে আচরণবিধি করা হয়েছে, সেটা মেনে প্রচারণা চালানো সম্ভব না। নির্বাচনী আচরণবিধিতে একটা পরিমার্জন এবং সংশোধন আনার দাবি তুলছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয় দলের নেতারাই। কিন্তু নির্বাচনী বিধিতে আছেটা কী? প্রার্থীরা কী করতে পারবেন? আর কী করা থেকে বিরত থাকতে হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই একটু জেনে নেওয়া যাক-
১. চাঁদা দেওয়া যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে কোনো চাঁদা/অনুদান দিতে পারবেন না।
২. সার্কিট হাউজ/ডাক বাংলোতে অবস্থান করা যাবে না
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনের আগে সরকারি সার্কিট হাউস, ডাক বাংলো বা রেস্ট হাউজে অবস্থান করতে পারবেন না।
৩. প্রচারণার কাজে সরকারি কার্যালয় ব্যবহার করা যাবে না
কোনো প্রার্থী তার পক্ষে প্রচারণার স্থান হিসেবে সরকারি কার্যালয় অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করতে পারবে না।
৪. জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা অন্য কেউ জনসভা বা বা শোভা যাত্রা করতে পারবে না।
৫. পথসভা বা ঘরোয়া সভা
পথসভা বা ঘরোয়া সভা করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সভার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তবে শর্ত হলো, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো সড়কে পথসভা করা যাবে না।
৬. প্রতিপক্ষের সভার ক্ষেত্রে
প্রার্থীরা এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না যাতে প্রতিপক্ষের সভা বা প্রচারণা পণ্ড হয় বা বাধা সৃষ্টি করে। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে কোনো প্রার্থী বা তার লোক বাধাসৃষ্টিকারী পক্ষের বিরুদ্ধে নিজেরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। অবশ্যই পুলিশের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিলে বিধি-নিষেধ
পোস্টার রঙিন হওয়া যাবে না। সাদা-কালো রংয়ের হতে হবে। আয়তন ৬০X৪৫ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না।
পোস্টারে সাধারণ পোর্ট্রেট ছবি থাকতে হবে। কোনো অনষ্ঠান বা বা মিছিলে নেতৃত্বদান অথবা প্রার্থনারত ভঙ্গিমার ছবি ছাপানো যাবে না। ছবির আকার ৬০X৪৫ সেন্টিমিটারের বেশি হতে পারবে না।
নির্বাচনী প্রতীকের আকার, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কোনোভাবেই ৩ মিটারের বেশি হতে পারবে না।
৮. অন্য কারও নাম, ছবি ব্যবহার করা যাবে না
নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার ও লিফলেটে কোনো প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারও নাম, ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। তবে প্রার্থী রাজনৈতিক দলের হলে বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টার বা লিফলেটে ছাপাতে পারবেন।
৯. প্রতীকের ক্ষেত্রে একাধিক রংয়ের ব্যবহার
পোস্টার বা লিফলেটে প্রার্থী প্রতীক প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একাধিক রংয়ের ব্যবহার করতে পারবেন না।
১০. মুদ্রনকারীর নাম-ঠিকানা প্রকাশ
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ মুদ্রনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা ও মুদ্রনের তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগাতে পারবে না।
১১. দেয়াল, যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট নয়
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনী এলাকার দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার লিফলেট, হ্যান্ড বিল লাগাতে পারবেন না। এমনকি রং, তুলি, চুন বা ক্যামিকেল ব্যবহার করে দেওয়াল বা যান বাহনে প্রার্থিদের কোনোকিছু লেখা বা আঁকা যাবে না।
১২. ভোটার স্লিপ ব্যবহার
প্রার্থী নিজে বা তার পক্ষে অন্য কেউ ভোটার স্লিপ প্রদান করতে পারবেন। তবে কোনো ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ ব্যবহার করা যাবে না। ভোটার স্লিপ (১২*৮) সেন্টিমিটারের বেশি আয়তনের হতে পারবে না। এতে প্রার্থীর নাম ও ছবি, পদের নাম, প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো কিছু উল্ল্যেখ করা যাবে না। তবে ভোটারের নাম, ভোটার নম্বর, এবং ভোট কেন্দ্রের নাম ইত্যাদি উল্লেখ করা যাবে। মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সংখ্যা ও তারিখবিহীন কোনো ভোটার স্লিপ মুদ্রণ করা যাবে না।
১৩. মিছিল-শোডাউন
নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকার মিছিল বা শো ডাউন করা যাবে না।
১৪. থানায় একের বেশি নির্বাচনী অফিস/ ক্যাম্প নয়
মেয়র পদে প্রার্থীরা প্রতি থানায় একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করতে পারবে না। ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে প্যান্ডেল বা ক্যাম্প করা যাবে না।
কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা ৩০ হাজার ভোটারের হারে একটির বেশি অফিস স্থাপন করতে পারবে না। তাদের নির্বাচনী অফিস কোনোভাবেই তিনটির বেশি হতে পারবে না।
নির্বাচনী অফিসে টেলিভিশন, ভিসিআর, ডিভিডি ইত্যাদি থাকতে পারবে না।
সড়ক, চলেচলের স্থান বা সাধারণের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প/ অফিস স্থাপন করা যাবে না।
১৫. হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যাবে না
প্রচারণায় কোনো প্রার্থী হেলিকপ্টার বা কোনো আকাশ যান ব্যবহার করতে পারবে না। দলীয় প্রধান যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেখান থেকে কোনো প্রচার সামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করা যাবে না।
১৬. ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে যান্ত্রিক যানবাহন নয়
ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে কোনো প্রার্থী বা অন্য কারও মোটর সাইকেল বা অন্য কোনো যান্ত্রিক যান প্রবেশ করতে পারবে না।
১৭. ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা-নেওয়া
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আনা নেওয়ার জন্য যান বাহন ভাড়া করতে পারবে না।
১৮. গেইট, তোরন, প্যান্ডেল এবং আলোকসজ্জাকরণ সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ
নির্বাচন উপলক্ষে কোনো গেইট, তোরন, ঘের নির্মাণ করা যাবে না। চলাচলের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
নির্বাচনী প্রচারণায় বিদ্যুতের সাহায্যে কোনোপ্রকার আলোকসজ্জা করা যাবে না।
১৯. খাবার দেওয়া যাবে না
নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরকম কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না।
২০. উপঢৌকন, বখশিশ, প্রতীক সম্বলিত জামা কাপড় নয়
ভোটারদের কোনোপ্রকার বখশিশ, উপঢৌকন বা প্রার্থীর ছবি, প্রতীক বা বক্তব্য সম্বলিত জ্যাকেট, শার্ট, ফতুয়া দেওয়া যাবে না।
২১. উস্কানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতি নয়
প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে কোনো উস্কানিমূলক বা মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
২২. লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত নয়
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তৃতা বিবৃতি দিতে পারবে না,
২৩. নাগরিকের সম্পত্তির ক্ষতিসাধন নয়
নির্বাচন উপলক্ষ্য কোনো নাগরিকের জমি ভবন বা অন্য কোনো স্থাপব অস্থাবর সম্পত্তির কোনোরূপ ক্ষতিসাধন করা যাবে না। উচ্ছৃংখল আচরণ করা নাগরিকের শান্তি ভঙ্গ করা যাবে না। বল প্রয়োগ বা অর্থ ব্যয় করে প্রভাবিত করা যাবে না।
২৪. বিস্ফোরক বহন
নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত চৌহদ্দির মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র বা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবে না।
২৫. জীবন্ত প্রাণী নয়
নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে প্রার্থীরা জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করতে পারবেন না।
২৬. মসজিদ, মন্দিরে নয়
মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না।
২৭. মাইক ব্যবহারের নিয়ম
নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। প্রতিটি ওয়াঈডে পথসভা বা নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আকটি বেশি মাইক্রফোন বা শব্দের মাত্রা বাড়ানোর জন্য অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না।
২৮. প্রচারণায় সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি নয়
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে প্রচারণায় বা তার এলাকার নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি শুধু তার এলাকায় গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। এমনকি প্রচারণার কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র ও যানবাহনও ব্যবহার করা যাবে না। কোনো প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতেও অংশ নিতে পারবে না।
২৯. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে অংশগ্রহণ
কোনো প্রার্থী যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বা মনোনীত হয়ে থাকেন তবে নির্বাচনপূর্ব সময়ে তিনি সেখানকার কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
৩০. তহবিল বরাদ্দ দেওয়া যাবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলর বা অন্য কোনো পদাধিকারী উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারবেন না। ইতিপূর্বে অনুমোদিত কোনো প্রকল্পে অর্থও প্রদান করতে পারবেন না।
৩১. বিলবোর্ড নয়
নির্বাচনি প্রচারনার ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না।
৩২. ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না।
৩৩. ব্যয়সীমা মানতে হবে
নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীরা দুই সিটিতে ভোটারপ্রতি যথাক্রমে ১.৬৬ ও ২.১১ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, মেয়র পদপ্রার্থীরা ২০ লাখের বেশি ভোটারের কোনো এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ‘নির্বাচনী ব্যয়’ করতে পারবেন। এছাড়া ‘ব্যক্তিগত ব্যয়’ হিসেবে ব্যয় করতে পারবেন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা। ফলে ঢাকার দুই সিটি ভোটেই মেয়র প্রার্থীরা সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫২ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings