in

সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় দেশে দেশে রমযান পালনে বৈচিত্র্য-২

ডব্লিউপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ, অর্থাৎ দেশটির প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি মানুষ মুসলিম। দেশটির মানুষজন ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের

১১ মার্চ, আরব নিউজ, দ্য জাকাতা পোস্ট: ইন্দোনেশিয়া: ডব্লিউপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ, অর্থাৎ দেশটির প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি মানুষ মুসলিম। দেশটির মানুষজন ইফতারে তেল ও মশলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম ফল এবং ফলের শরবতকে প্রাধান্য দেয়। এছাড়া, তাদের ইফতার আয়োজনে নানা রকম মিষ্টি জাতীয় খাবারও থাকে।

ইন্দোনেশিয়ার সংবাদপত্র দ্য জাকার্তা পোস্ট-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুবুর চ্যান্ডিল নামক এক ধরনের মিষ্টান্ন; মিষ্টি আলু দিয়ে তৈরি বিজি সালাক; কলা, মিষ্টি আলু অথবা কুমড়া দিয়ে তৈরি কোলাক; কলা দিয়ে তৈরি এস পিসাং ইজো সহ আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার এসময় ইন্দোনেশিয়ানরা তৈরি করে থাকে।

বাংলাদেশ: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ ১৫ কোটির বেশি মানুষ মুসলিম। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও ইফতারে অনেক ভাজা- পোড়া খাবার খেতে দেখা যায়। এর মধ্যে থাকে- পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, বিভিন্ন ধরনের সবজির পাকোড়া ইত্যাদি। এছাড়া তাদের ইফতার আয়োজনে আরও থাকে মুড়ি, ছোলা বুট, জিলাপি, হালিমসহ নানা রকমের শরবত ও ফল। এসব হালকা খাবারের পাশাপাশি অনেক পরিবার ইফতারের সময় হাতে তৈরি নানা রকমের পিঠা-পুলি, তেহারি, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, তন্দুরি চিকেনের মতো ভারী খাবারও খায়।

তবে ফলের মধ্যে খেজুর প্রায় অপরিহার্যই বলা যেতে পারে। এটি ছাড়া বাংলাদেশি মুসলিমদের ইফতার টেবিল একরকম অসম্পূর্ণই বলা যায়। মসজিদগুলোতে যে ইফতার আয়োজন করা হয়, সেখানেও খেজুরের উপস্থিতি থাকে। মূলত, ইসলামের নবী ইফতারের শুরুতে খেজুর খেতেন বলে বিশ্বব্যাপী এটি এত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ ইফতারে খেজুর, ছোলা-বুট, ভাজাপোড়া, ফলমূল ইত্যাদি খান।

নাইজেরিয়া: ডব্লিউপিআর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ মুসলিম জনগোষ্ঠী বসবাসের দিক থেকে শীর্ষ দশের মাঝে আছে পশ্চিম আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়াও। যদিও দেশটিতে মুসলিম আছে নয় কোটি ৭০ লক্ষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪২ শতাংশ। নাইজেরিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ইফতারে শর্করা জাতীয় খাবার ও ফলমূলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। যেমন- জল্লফ রাইস, এটি নাইজেরিয়ানদের অন্যতম প্রধান খাবার। চাল, পিঁয়াজ, টমেটো, মরিচ ইত্যাদির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়। এটি তারা সবজি বা মাংসের সাথে খান। পাশাপাশি মই মই (পুডিং), ইয়াম (এক ধরনের আলু), আকারা (বিন কেক), মাসা (রাইস কেক), ইলুবো ও আমালা’র (ইয়াম দিয়ে তৈরি এক বিশেষ খাবার) মতো আরও নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারও তাদের ইফতার তালিকায় থাকে।

ইরান: ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, যার ৯২ শতাংশ মানুষ (আট কোটি ২৫ লক্ষ) মানুষ মুসলিম। রুটি, স্যুপ, র‌্যাপ, কাবাবের মতো সুপরিচিত খাবারের পাশাপাশি ইফতারে ইরানের ঘরে ঘরে তৈরি হয় জাফরানের ঘ্রাণযুক্ত এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী পার্শিয়ান হালুয়া। এছাড়া, জাফরান চাল দিয়ে তৈরি ‘শোলেহ জার্দ’ নামক এক ধরনের পুডিংও ইরানিদের খুব প্রিয়। পার্শিয়ান নুডুলস, সবজি, পেঁয়াজ, বিন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি আশ রাসতেহ নামক ঘন স্যুপ ও হালিমও সেখানে ইফতারের সময় আগ্রহ নিয়ে খাওয়া হয়। সেইসাথে, তাদের ইফতারে আরও থাকে স্যান্ডউইচ, চা, তাবরেজি চিজ, জুলবিয়া (বাংলায় যাকে জিলাপি বলা হয়, বামিয়েহ নামক এক ধরনের মিষ্টান্ন ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ইরানের অন্যতম প্রধান খাবার হলো খেজুর। তাই, ইফতার টেবিলে এর উপস্থিতি অনেকটাই অপরিহার্য।

আলজেরিয়া: উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ মুসলিম। ডব্লিউপিআর-এর হিসেবে, দেশটিতে মাত্র সাড়ে চার কোটি মুসলিম বসবাস করে। জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ মুসলিম দেশগুলোর মাঝে এর অবস্থান দশম।

আলজেরিয়ান মুসলিমরা পিজ্জা ‘সোয়ারবা’, সবজি রোল, আলু, সবজি দিয়ে তৈরি দোলমা ইত্যাদি দিয়ে তাদের ইফতার শুরু করেন। মাগরিবের নামাজের পর তারা ‘সিগার’ নামক এক ধরনের পানীয় পান করেন, যা বাদাম দিয়ে তৈরি। এছাড়া, তাদের ইফতারের তালিকায় বিভিন্ন স্যুপও থাকে।

সৌদি আরব: মুসলিম দেশগুলো নিয়ে আলোচনা করলে সৌদি আরবের কথা না বললেই নয়। যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে শীর্ষ দশে নেই দেশটি। ডব্লিউপিআর-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে মোট সোয়া তিন কোটি মুসলিম বসবাস করে, যা দেশটির মোট জনংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ। সৌদিরা ইফতারের শুরুতে ‘গাহওয়া’ নামক অ্যারাবিক কফি পান করেন এবং সেইসাথে অবশ্যই খেজুর খান। এরপর তারা মাগরিবের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে তারা ভারী খাবার খান। সৌদি আরবেও অঞ্চলভেদে ইফতারের খাবারে ভিন্নতা রয়েছে। দেশটির পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ তাদের ইফতারে শৌরাইক রুটি ও দুজ্ঞাহ নামক ঐতিহ্যবাহী খবার খান। আবার, পূর্বাঞ্চলের লোকেরা ইফতারে সালুনা নামের একটি খাবার খান, যা মাংস ও সবজির স্টু দিয়ে তৈরি।

দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মানুষ তাদের রোজা ভাঙ্গেন আসিদাহ, মারগগ, মাফরৌক ও মাতাজিজ নামক ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে। এগুলো বাদামি আটা, গরুর মাংস, সবজি, মধু, পিঁয়াজ বা ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। দেশটির আরেকটি জনপ্রিয় খাবার থারিদ, যা মূলত ভেড়ার মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ জাতীয় খাবার।

পাকিস্তান : যুগ যুগ ধরে পাকিস্তানে রমজান মাস উদযাপন করা হয় বাহারি ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে। প্রতিবেশী, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ঘটা করে ইফতার করা পাকিস্তানের সংস্কৃতির অংশ। তাদের ঐতিহ্যবাহী ইফতারের তালিকায় থাকে বিভিন্ন ধরনের কাবাব, চানা চাট, দই বালাই, কাল্লি (নুডলস্ স্যুপ), নিমকি জাতীয় খাবার নামাক পাড়া, পাপড়, ভেজিটেবল পাকোড়া, ফ্রুট সালাদ ইত্যাদি।

ভারত: ভারতের মুসলিমরা সাধারণত মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে। তবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্েয ভরপুর এখানকার একেক রাজ্যের ইফতারির আয়োজন একেক রকম। যেমন হায়দরাবাদের লোকজনের খাবারের তালিকায় থাকে হালিম, কলকাতার ইফতারে থাকে খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল এবং চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেটের মতো মুখরোচক খাবার। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতারের প্লেটে থাকে ননবো কাঞ্জি নামের এক ধরনের খাবার।

মালদ্বীপ : দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম প্রধান ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্র ভিন্নধর্মী উপায়ে রোজার মাস উদযাপন করে। ইফতারের সময়ে মালদ্বীপের কবিরা ‘রাইভারু’ নামের রমজান সম্পর্কিত এক ধরনের কবিতা আবৃত্তি করে থাকেন। এই কবিতাগুলো হয় ৩ বা তার বেশি লাইনের। প্রাচীনকাল থেকেই মালদ্বীপে এই রাইভারু আবৃত্তির সংস্কৃতি আছে। তাদের ইফতারে থাকে কুলহি বোয়াকিবা (মাছ দিয়ে তৈরি এক ধরনের কেক), ফোনিবোয়াকিবা (ময়দা দিয়ে বানানো কেক), গুলহা (মাছের কোফতা) ইত্যাদি। 

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

সয়াবিনের পর অস্থির হচ্ছে ছোলার বাজার