করোনা সংকটে গত বছরের মে মাসে বেতন কমায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এখন তারা বেতনের এই কর্তন ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা ভাবছে।
বিমানের পাইলটসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কর্তন কমানোর বিষয়টি এখন আলোচনার পর্যায়ে। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, গত শনিবার বিমানের পরিচালনা পর্ষদের একটি সভা হয়। সভায় পাইলটসহ বিমানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কর্তন কমানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটির সবার বেতন কর্তন ১০ শতাংশ কমানোর কথা সভায় ওঠে। তবে সভায় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমানের পরিচালনা পর্ষদ।
বিমান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিমানের পাইলটসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কর্তন কমানো হতে পারে। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন আর কাটা হবে না।
করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও সংকটে পড়ে। করোনাকালে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা কমেনি। তবে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মীদের বেতন কর্তন করা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বন্ধ করা হয় ভাতা। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে পাইলটসহ বিমানের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, করোনা সংকটে বিমানের পাইলটসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা কমেছে। এর মধ্যে পাইলটদের বেতন সবচেয়ে বেশি কমেছে। বন্ধ হয়েছে তাঁদের বিভিন্ন ভাতাও। অন্যদিকে বেড়েছে কর্মঘণ্টা।
গত বছরের ৫ মে এক প্রশাসনিক আদেশে বিমানের পাইলট, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কমানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানো হয়। পাইলটদের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন কর্তন করা হয়। একই সঙ্গে স্থায়ী প্রকৃতির ভাতা-ফুড সাবসিডি, মিল ও মিল্ক অ্যালাউন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া পাইলটদের ওভারটাইম, প্রোডাক্টিভিটি অ্যালাউন্স, ফ্লাইং অ্যালাউন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিমান কর্তৃপক্ষের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্তে হতাশ হন পাইলট, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। তা সত্ত্বেও তাঁরা এখন পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সদস্যরা বলছেন, করোনাকালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হয়ে তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বিমান চালিয়েছেন। এখনো চালাচ্ছেন। তাঁদের যে বেতন-ভাতা গত এক বছরে কর্তন করা হয়েছে, তা কমিয়ে আনার বিষয়ে আলাপ হচ্ছে। চলতি মার্চ মাসের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ তাঁদের বেতন-ভাতা আগের মতো করবে বলে আশা পাইলটদের।
পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, গত এক বছরে যেটুকু বেতন-ভাতা কর্তন করা হয়েছে, খুব শিগগির সেই বিষয়ের একটা স্থায়ী সমাধান হবে। আমরা বিমান কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আশা দিয়েছেন।’
ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, পাইলটরা করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন। পাইলটরা সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরেছেন। এত কিছুর পরও করোনার সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে পাইলটরা যদি তাঁদের আগের বেতন-ভাতা না পান, তাহলে তাঁরা কষ্ট পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে খুব শিগগির বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান বিমানসচিব।
GIPHY App Key not set. Please check settings