অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ হতে পারে। নবী-রাসুলরাও অসুস্থ হয়েছেন। সবকালের সবশ্রেষ্ঠ রসুলুল্লাহ (সা.)কয়েকবার অসুস্থ হয়েছেন। তাঁকেও অসুস্থতার কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে। এটি আবশ্যক নয় যে অসুস্থতা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর অসন্তুষ্টির দলিল। মুমিনের জন্য তার গুনাহর কাফফারাও হতে পারে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়—সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৩৮) অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দার স্তর উন্নত হয়। অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)
রোগের কোনো নিজস্ব শক্তি আছে কি?
রোগের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। রোগ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সুস্থতা দানের মালিক তিনিই। কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। সুস্থও করতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা.) ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে জনৈক বেদুইন আরব জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? অতঃপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে? (উত্তরে) তিনি বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল? যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭৪২) তবে আল্লাহ কোনো রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৭৩)
মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ
দ্বিনের হেফাজতের জন্য মৃত্যুবরণকারীই প্রকৃত শহীদ। তবে মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে যে ঈমানদার ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদের হুকুমে থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়া আরো সাত প্রকারের শহীদ আছে। (যথা) মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। পানিতে ডুবে মরা ব্যক্তি শহীদ। নিউমোনিয়া রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ। আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তি শহীদ। চাপা পড়ে নিহত ব্যক্তি শহীদ। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যাওয়া স্ত্রীলোক শহীদ এবং পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৩)
রোগব্যাধি প্রতিরোধে ইসলামী ব্যবস্থা
ইসলাম রোগব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে Prevention is better than cure রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময় থেকে শ্রেয়। ইসলামে আহার্য ও পানীয় বস্তুতে ফুঁ দিতে নিষেধ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসুলুল্লাহ (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৮৬)
মধু ও কালিজিরা ইত্যাদি বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তার (মৌমাছির) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু), যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৯) আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘কালিজিরার মধ্যে মৃত্যু ছাড়া অন্য সব রোগের আরোগ্য রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৮৬)স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। দাঁত ও মুখ অপরিষ্কার থাকলে বিভিন্ন প্রকারের রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে নবীজি (সা.) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের ওপর যদি কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজের অজুর সঙ্গে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২)
ডাক্তাররা করোনাভাইরাসসহ অনেক ধরনের রোগব্যাধি প্রতিরোধে হাত পরিষ্কার রাখতে বলে থাকেন। ইসলামেও হাত, মুখ, মাথা ও পা পরিষ্কার রাখার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আছে। এর জন্য পবিত্র ও পরিষ্কার পানি দিয়ে অজু করতে হয়। অজুতে নাক, মুখ, কান ও চোখ, কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত এবং পায়ের গোছা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ধুতে হয়। এ অঙ্গগুলোতে কোনো ধূলিকণা বা রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে না। ফলে নামাজি ব্যক্তি বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে। মোট কথা, ইসলামের সব ব্যবস্থাপত্রে মানুষের রোগব্যাধির প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। ইসলামের সব ব্যবস্থাপনা মেনে চললে সব রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।
GIPHY App Key not set. Please check settings