জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান নানা পরিকল্পনা করেছে। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পরিকল্পনার তালিকা করেছে কমিটি। আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক ক্ষণগণনা।
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’ এবং ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় কমিটির সভাপতি। জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়াবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকসহ সমাজের বিশিষ্টজন মিলিয়ে ১১৯ জন এ কমিটিতে রয়েছেন। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং এই কমিটির মোট সদস্যসংখ্যা ৭৯ জন।প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী মহাযজ্ঞের মধ্যে থাকছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ঘিরে বড় পরিসরের কর্মসূচির পাশাপাশি পুরো বছরে থাকছে বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়া আনন্দ আয়োজন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্রের পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ।
১৭ মার্চ ২০২০ থেকে শুরু হয়ে ১৭ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত চলবে মুজিববর্ষের কর্মকাণ্ড। আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া ক্ষণগণনার মাধ্যমে ১৭ মার্চ মুজিববর্ষে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। এদিনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আবহও ‘প্রতীকীভাবে’ ফুটিয়ে তোলা হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যে বিমানে করে দেশে ফিরেছিলেন, সেই আদলের একটি বিমান ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে থাকবে বলে জানা গেছে।
আয়োজনের যা যা থাকছে
১৭ মার্চ
মুজিববর্ষের বছরব্যাপী আয়োজনের সূচনা হবে আগামী ১৭ মার্চ। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহর ও বিভিন্ন স্থানে ৩১ বার তোপধ্বনি, সব সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, টুঙ্গীপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা আয়োজন করা হবে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক আয়োজন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সেদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। এদিন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হবে।
২২-২৩ মার্চ
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ মার্চ অধিবেশনের শুরুর আগে সব সংসদ সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেবেন।
এছাড়া ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন; ২৬ মার্চ মুজিববর্ষের আবহে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস পালন; ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর দিবস উদযাপন; ২৩ মে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তি দিবস উদযাপন; ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস পালন; ২৩ জুন রোজ গার্ডেন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন; ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন উদযাপন; ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন; ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা; ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও অন্যান্য স্থানে জেল হত্যা দিবস পালন; ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ সারা দেশের সকল বধ্যভূমিতে ও অন্যান্য স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন; ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় প্যারেড স্কয়ার ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে বিজয় দিবস উদযাপন; ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদ্যাপন; ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন; ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের বার্ষিকী উদযাপন; ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদ্যাপনে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন এবং আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টের আয়োজন; ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং টুঙ্গীপাড়ায় জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান।
এদিকে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে- ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তর, জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়, ব্রাসেলসে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ও প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে আরো পাঁচটি বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে বঙ্গবন্ধু সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হবে। লন্ডনে মাদাম তুসো জাদুঘর এবং জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য স্থাপন এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও আদর্শভিত্তিক চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হবে।
মুজিববর্ষে ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার ইভেন্ট আয়োজন করবে বাস্তবায়ন কমিটি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল-২০২০, দুটি আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেট ম্যাচ, জাতির পিতার নামে আন্তর্জাতিক হকি টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক সাফ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব কাবাডি প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক ভলিবল প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক রোলবল গোল্ডকাপ, আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা, ইন্টারন্যাশনাল এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা থাকবে।
মুজিববর্ষে থাকবে ইন্টারন্যাশনাল আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, থ্রি অন থ্রি (বিচ) বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক মহিলা বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টারস দাবা প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা, মহা ঘুড়ি উৎসব, সাফ জুনিয়র বক্সিং টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক ইয়োগা প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো, আন্তর্জাতিক খো খো, আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক জুডো প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতা, সাউথ এশিয়ান ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ, আন্তর্জাতিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন।
এছাড়া অমর একুশে বইমেলা ২০২১ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে। চলতি বছরের নভেম্বরে জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০২০ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বইমেলাটিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ২৯৪টি পরিকল্পনার বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
https://drive.google.com/file/d/1DrVf1W96nCJM5XqS8uAurHR9ErzDVS7Z/view
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings