রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর নুসরাত সুলতানার বিরুদ্ধে। বিভাগটির সাবেক ছাত্র বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নূরুল হুদা হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে রিট দায়ের করেন। ফলে নূর নুসরাত সুলতানাসহ আইন বিভাগের ৩জন শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ বলে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
নূর নুসরাত সুলতানা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম ঠান্ডুর মেয়ে। বাবার তদবিরে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের সময়ে নিয়োগ পান তিনি।
বিভাগের অন্য দুইজন শিক্ষক হলেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালাউদ্দিন সাইমুম ও বনশ্রী রাণী যিনি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
এদিকে ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসির প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনের ২১ নং পর্যবেক্ষণে নূর নুসরাতের এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
২০১৮ সালের আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর যেকোনো একটিতে সনাতনী পদ্ধতিতে ১ম শ্রেণি এবং গ্রেডিং সিস্টেমে সিজিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। কিন্তু নূর নুসরাত সুলতানা একটিতেও ১ম শ্রেণি বা সিজিপিএ ৩.৫০ নেই বলে ইউজিসির করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। তবুও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান এ শিক্ষক।
নূর নুসরাত সুলতানার আবেদন পত্র থেকে জানা যায়, তিনি ব্রিটেনের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ২০১৬ সালে বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন থেকে ৬৩.৩৩% নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকোত্তরে ৬৩.৩৩% মার্কসকে ১ম শ্রেণি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে উল্লেখ করেন নূর নুসরাত। কিন্তু বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩% নম্বর ২য় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও ইউজিসি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩% নম্বরকে সিজিপিএ-৩ বা দ্বিতীয় শ্রেণি ধরা হয়।
এছাড়াও আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আরেকটি শর্ত ছিল যে, অনলাইন বা দূরশীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডিগ্রি আবেদনের অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে। কিন্তু নূর নুসরাত সুলতানার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রাপ্ত ডিগ্রিটি অনলাইন বা দূরশীক্ষণের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে বলে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। নূর নুসরাত সুলতানা ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশের ৮ বছর পর স্নাতক এবং ৩ বছর পর স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
ইউজিসি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের আইন বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের যোগ্যতার তথ্য অনুযায়ী নূর নুসারতের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটি হল বিদেশি। ফলে বিদেশি ডিগ্রি সমতায়ন না করেই স্নাতকত্তোর প্রাপ্ত ৬৩.৩৩% নম্বরকে ১ম শ্রেণি দেখিয়ে নিয়োগ প্রদান করা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মনে করেন ইউজিসি তদন্ত কমিটি।
এদিকে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি তার অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় ৪ বছর হয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অদৃশ্য কারণে এখনো নূর নুসারত সুলতানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর নুসরাত সুলতানা বলেন, বিদেশি ডিগ্রীর ৬০% মার্কসে প্রথম শ্রেণী দেখিয়ে অনেকেই রাবিতে নিয়োগ পেয়েছেন। ৬০% মার্কস দেখিয়ে রাবির লোক প্রশাসন বিভাগে শাহরিয়ার স্যার নিয়োগ পান পরে তিনি ঢাবিতেও জয়েন করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তারেক নূর স্যারও এভাবেই নিয়োগ পান। নর্থ আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান মাস্টার্সকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্সে এমফিলের পদমর্যাদা দেওয়া হয়। বিদেশি ডিগ্রীর গ্রেডিংয়ের উপর বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। ৬০% মার্কসকে বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণী ধরা হয় এবং এভাবেই প্রথম শ্রেণী ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটকারী আইনজীবী নূরুল হুদা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি হলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা আদালত বাতিল করতে পারে। ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসি তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রায় ৪ বছর হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো নূর নুসরাত সুলতানাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যেটা খুবই হতাশাজনক। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউজিসির তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমি আইন বিভাগের ওই নিয়োগ বাতিলের জন্য রিট দায়ের করি। আমার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই নিয়োগ বাতিলের রুল জারি করেছে। এ বছরের শেষে ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানী হতে পারে বলে জানান তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন,’এ বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা ছিলো না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings