আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের মালিক হচ্ছেন জো বাইডেন। ডেমোক্যাট এই নেতা ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে সেটা নিয়ে হিসেব-নিকেশ শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে। প্রতিবেশী ভারত এরই মধ্যে নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে বাইডেনের আমলে তাদের লাভক্ষতির হিসাব মিলিয়ে ফেলেছে। পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরিয়ে তিনি যদি ক্ষমতায় আসেন, তা হলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী কী বদল ঘটতে পারে?
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসে এইচওয়ানবি ভিসার কথা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে সামনে রেখে কড়া ভিসা নীতি এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন এলে ভিসা নীতি কিছুটা শিথিল হবে বলেই আশাবাদী নেটিজেনদের একাংশ। কিন্তু সেখানেও একটা আশঙ্কা থাকছে। করোনা পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মজবুত করতে আমেরিকানদের চাকরির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন ট্রাম্প, যা জনমানসে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন ভিসা নীতি শিথিল করে অভিবাসীদের কাজের পথ কতটা প্রশস্ত করবেন, প্রশ্ন থাকছেই।
দ্বিতীয় বিষয়টি অবশ্যই চিন। ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করা বাইডেন চীনের ব্যাপারে আরও কার্যকর নীতি নেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প চিনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ালেও জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের উপর আক্রমণ, হংকং ও তাইওয়ানে চিনের নীতি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। উল্টোদিকে বাইডেন বরাবরই চিনের এই নীতির ঘোর সমালোচক। সেক্ষেত্রে শুধু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চীনকে বাইডেন চাপে রাখবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যত খারাপ হয়, ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে লাভ ঠিক ততটাই। কিন্তু, সেখানেও একটা আশঙ্কার জায়গা থাকছে। লাদাখ সীমান্তে আগ্রাসন থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ট্রাম্প ভারতকে সোচ্চার সমর্থন ও চীনের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ রাজনীতিক বাইডেন এ ব্যাপারে অনেকটাই ভারসাম্যের নীতি নেবেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে চীন প্রশ্নে বাইডেনের ঘোষিত সমর্থন ভারত পাবে কি না, থাকছে সংশয়।
এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে একটা প্রশ্ন। তা হলো, বাইডেন এলে ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক উন্নত হবে, এটা মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ততটা সুমধুর হবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা দু’জনেরই অতি দক্ষিণপন্থী মতাদর্শের কারণে। পূর্বসূরি ওবামার সাথে বারাক’ সম্বোধনের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু ২০১৫ সালে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি হয়ে আসা ওবামা ভারতের অসহিষ্ণুতার আবহ নিয়ে মুখ খুলতে পিছপা হননি। তার বড় কারণ, ওবামা বরাবর মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে সোচ্চার। ঠিক একই ভাবে বাইডেনও মানবাধিকারের প্রশ্নে সরব। কাশ্মিরের ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন কমলা হ্যারিসও। ফলে, মানবাধিকার, লাভ জিহাদের মতো বিষয় বা এনআরসি, সিএএ প্রসঙ্গে বাইডেন চুপ থাকবেন, এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই। আর সেখানেই চিন্তা মোদীপন্থীদের। সূত্রের খবর, বাইডেনের মতাদর্শ আঁচ করে হোয়াইট হাউসে ফের ট্রাম্পকেই দেখতে চায় গেরুয়া শিবির। সে আশা পূরণ হবে কি না, তা জানতে অবশ্য আরো কিছুটা অপেক্ষা।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings