in

বর্তমান সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান যুক্তিসংগত নয়: ড. কামাল হ

বর্তমান সংবিধানকে ফেলে দেওয়া ‘একদমই ভুল হবে’ বলে মনে করেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, এত দিন এই সংবিধানের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। সেটা ফেলে দিয়ে নতুন একটা সংবিধান করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।

‘৭২-এর সংবিধান ও প্রস্তাবিত সংস্কার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি।

সংবিধানকে ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান করা—এটা সংস্কার নয়, এটা সংবিধানকে ধ্বংস করার একটা পথ বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল হোসেন। সংবিধান পুনর্লিখন একটা ভুল ধারণা—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংস্কারের প্রয়োজন আছে, সংস্কার বিবেচনাযোগ্য। বিস্তর আলোচনার পর যদি ঐকমত্য হয়, তখন সংবিধান সংশোধন করা যায়।

এই আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন বক্তব্য দেওয়ার আগে তাঁর একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান জাতির সংগ্রামের ফসল। এটি কেবল আইনের একটি দলিল নয়, বরং আমাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।’ তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়েছে যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা কখনোই উপেক্ষা করা যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন ও সংশোধনে যেন দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন হয় এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন সংবিধানকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে।’

ড. কামালের মতে, ব্যাপক পরামর্শ ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি এগিয়ে নিতে হবে। তা না হলে সংবিধানের কোনো পরিবর্তন ও সংশোধন জাতীয় কল্যাণ বয়ে আনবে না।

সংবিধানের ব্যাপক সংশোধনীর পক্ষে নন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, অল্প অল্প করে পর্যায়ক্রমে ভালোর দিকে যেতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে, সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, এই বাস্তবতায় গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক দলগুলো পা রাখার মতো মাটি দ্রুত পাবে না। তিনি বলেন, বিগত ৫৩ বছর বিচার করলে রাষ্ট্রধর্ম আর ধর্মনিরপেক্ষতা—দুটি কথাই সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত। গণতন্ত্রের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা আসতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা ব্যবহার না করে অন্যভাবে এগোতে পারলে ভালো।

সভায় অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা ফেলে দেওয়ার প্রস্তাবের ফলে ধীরে ধীরে ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তির উত্থান হচ্ছে; যা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবু সাইয়িদ বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে হবে, না হলে দেশে শান্তি আসবে না।

‘৭২-এর সংবিধান ও প্রস্তাবিত সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনে নারীদের যথার্থ প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। সংবিধানের মূলনীতি বহাল রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।

সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই এ ধরনের আলোচনা বেশি হওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান। তিনি বলেন, ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের সময় ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছিল। তারপরও এটি সংবিধানে যুক্ত করা হয়। এখন সংবিধান সংস্কার হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সোহরাব হাসান বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পালিয়ে যাওয়ার পর যে সরকার এসেছে, সেই সরকার মানবাধিকার কতটা রক্ষা করতে পেরেছে, সে প্রশ্ন উঠেছে।

সংবিধান সংস্কারের নামে আগুনে হাত না দেওয়ার আহ্বান জানান গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন হানাহানি থাকবে।

সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল বারী। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য গঠিত কমিশনে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ আরও দুজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে রাখার দাবি জানান জাহিদুল বারী। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার বক্তব্য স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অন্তরায় বলেও তাঁর অভিযোগ।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, আইনজীবী এস এম এ সবুর ও আইনজীবী আবু ইয়াহিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ : ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৪৬ আসামি

বিশিষ্ট ব্লকচেইন গবেষক চেন জিং যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে বেইজিংয়ের