অনন্যাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে পাঁচ বছর লেগে গিয়েছিল রুদ্রের। ঠিকঠাকভাবে অনন্যার ঠিকানাটা জোগাড় করতেই কেটে গিয়েছিল চার বছর। তারপর শুরু হলো চিঠি লেখার কর্মযজ্ঞ। চিঠিতে কী লিখবে, কীভাবে লিখবে, হাতের লেখাটা ঠিক হচ্ছে কিনা- এসব নিয়ে কত শত চিন্তা ভাবনা, কত কাটাকুটি। শেষমেষ মনের মতো করে প্রেমপত্র লিখে পাঠানো হলো অনন্যাকে। প্রেয়সীর হাতে সেটা পৌঁছাতে লেগেছিল আরও ৭ দিন। এখনকার তরুণ-তরুণীদের কাছে এরকম প্রেমকাহিনী অনেকটা রূপকথার মতোই মনে হবে। অথচ একটা সময় এমন ঘটনা ঘটতো অহরহ। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের এই যুগে প্রেম নিবেদন করতে কয়েক সেকেন্ডের বেশি দরকার হয় না। মুঠো ফোনের মাধ্যমে দূর দূরান্ত থেকেও প্রেমিক প্রেমিকারা সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখতে পারেন। কিন্তু যখন মুঠোফোন ছিল না, কেমন করে গড়ে উঠতো প্রেম? কীভাবেই বা করা হতো প্রেম নিবেদন? সেই সময়টাই একটু ফিরে দেখে নেওয়া যাক।
#1
#2 পত্রমিতালী
১৯৮০’র দশকে চিঠি লিখে মনের মানুষ খুঁজে পাওয়ার জনপ্রিয় এক মাধ্যম ছিল পত্রমিতালী। ম্যাগাজিন আকারে বের হতো, বন্ধুত্ব প্রত্যাশীদের নাম-ঠিকানা। দুই টাকার বিনিময়ে যে কেউ চাইলেই সেসব ম্যাগাজিনে নিজের নাম ঠিকানা ছাপাতে পারতো। শুধু নাম-ঠিকানাটুকুই। সেখানে থাকতো না কোনো ছবিও। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা একটু পছন্দসই নাম পেলেই চিঠি লিখে ফেলতো। এভাবেই হতো পরিচয়। সেখান থেকে অনেকেরই সম্পর্ক প্রণয় পর্যন্ত গড়াতো। তবে পরিণয়ের সংখ্যাটা ছিল একেবারেই কম। অনেকে আবার বহু বছর চিঠি আদান-প্রদানের পরেও অদেখা-অজানাই রয়ে যেতেন। মেয়ে সেজে ছেলেকে চিঠি দেওয়ার মতো ঘটনাও তখন ঘটতো প্রচুর। সেলফোনবিহীন সেই যুগে অনেকেরই বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই পত্রমিতালী।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
#3 ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন
পত্রমিতালীর পরের ধাপে প্রেমে পড়ার নতুন মাধ্যম হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন। অনেক উঠতি তারকারাও তখন পত্রিকাগুলোয় ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন লিখতেন। এই বিজ্ঞাপণের বদৌলতেই ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র মতো পত্রিকাগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েছিল কয়েকগুণ। এই মাধ্যমটির আবার কিছু কড়াকড়ি নিয়মও ছিল। বিজ্ঞাপনগুলো সেন্সর করে ছাপানো হতো। তাছাড়া একটা পোস্ট বক্সও নিতে হতো। শোনা যায়, লেখিকা তসলিমা নাসরিন আর কবি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ নাকি এই ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। কবি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিচিত্রায় তসলিমা নাসরিনের বিজ্ঞাপন দেখে তাকে উৎসর্গ করে একটা কবিতা লিখেছিলেন তিনি। বিচিত্রাতে ছাপা হয়েছিল সেটি। দুজনের প্রণয়ের শুরুটা হয়েছিল সেখান থেকেই।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
#4 টেলিফোন
#5 মোবাইল ফোন
নব্বইয়ের পর খুব দ্রুতই সব বদলাতে শুরু করে। প্রেম ঘটানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় মোবাইল ফোন। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার প্রেমের অবলম্বনে পরিণত হয় এটা। নিজের নাম্বারের সঙ্গে নাম্বার মিলিয়ে ফোন দেওয়া, অতঃপর প্রেম। এমন ঘটনা ঘটেছে প্রচুর। আর এখন তো ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপসহ অনলাইন অ্যাপসগুলোর রমরমা অবস্থা।
না দেখে প্রেমে পড়ার দিন তো সেই কবেই গেছে। অনেকেই মজা করে বলেন ‘যাও পাখি বল তারে, সে যেন ভোলে না মোরে’র যুগ থেকে ‘লোকাল বাসে’র যুগে চলে এসেছে প্রেম। একাটা সময় প্রেমিক-প্রেমিকারা চিঠির জবাবের আশায় মাসের পর মাস অপেক্ষা করতো, এখন সেখানে টেক্সট এর রিপ্লাই দিতে একটু দেরি হলেই ব্রেক আপ! একটা সময় যেখানে প্রেমিকাকে এক নজর দেখতে বহুদূরের পথ পাড়ি দিত প্রেমিক, এখন সেখানে ভিডিও চ্যাটিংয়ে ২৪ ঘন্টা একে অপরের চোখের সামনেই থাকতে পারছেন তারা। কিন্তু প্রেমের মাধ্যমের আমূল পরিবর্তন কি প্রেমের বন্ধনকে দৃঢ় করেছে? নানা গবেষণা আর পরিসংখ্যান কিন্তু উল্টো ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রেমের মাধ্যম যতই হাতের মুঠোয় এসেছে, ভালোবাসা নাকি ততই ঠুনকো হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম যা- কিছুই থাকুক না কেন, প্রেম প্রকাশ কিংবা প্রেমের বন্ধনকে দৃঢ় করার সবচেয়ে মোক্ষম মাধ্যম হলো চিঠি। কারণ হাতে লেখা প্রেমপত্রগুলো কেবল কাগজের টুকরোই নয়, বরং এগুলো সঙ্গীর মধ্যে দৃঢ় অনুভূতি জাগ্রত করার ক্ষমতা রাখে।
যখন আপনার অনুভূতিগুলো কাগজের উপর ছড়িয়ে পড়ে, আপনি নিজের দুর্বলতাগুলো তার কাছে নির্দ্বিধায় তুলে ধরেন, তখন অন্য কোনোকিছুই আপনার সঙ্গীকে এর চেয়ে বেশি খুশি করতে পারে না। ফোনের মাধ্যমে পাঠানো ভার্চুয়াল মেসেজের তুলনায় চিঠির অক্ষরগুলো স্থায়ী। অস্থায়ী হওয়ায় আপনি মেসেজগুলো ধরে রাখতে পারবেন না। মেসেজগুলো দেখতে পাবেন ঠিকই তবে সেগুলো আপনার হাতে থাকা চিঠির মতো অনুভব করতে পারবেন না।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings