in

প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি দখলে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা!

মালটিপ্লানে দুই ব্যবসায়ীর ওপর হামলার নেপথ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল-ইমনের দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজি n সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কারাগারে থাকা দুই সন্ত্রাসী

চাঁদা না পেয়ে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার। সেটাও সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতা ও ব্যবসায়ীদের কারণে। ক্ষোভ থেকেই গত ১০ জানুয়ারি রাতে টার্গেট করে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে কোপানো হয় দুই ব্যবসায়ীকে। তবে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম, যারা একসময় অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তারা হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। যারা গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর গত ১৫ ও ১৬ আগস্ট কারাগার থেকে জামিনে বের হন।

জানা গেছে, হামলার নেপথ্যে রয়েছে এ দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। যারা জেলে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন অপরাধ জগত। গত শুক্রবার রাতে ব্যস্ত সড়কে ১২-১৫ জনের দুর্বৃত্ত দলের এক থেকে দেড় মিনিটের অতর্কিত হামলার শিকার হন এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেসামুল হক। এ ঘটনার ১০-১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে চাপাতি দিয়ে কোপানোর নৃশংসতা ফুটে উঠেছে।

পরে তাদের উদ্ধার করে পাশের পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় হাত ও পায়ে মারাত্মক জখম নিয়ে এহতেসাম এখনো হাসপাতালে ভর্তি। আর হাতে জখম নিয়ে চিকিত্সা শেষে ছাড়া পেয়ে শনিবার রাতে নিউ মার্কেট থানায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী দীপু। মামলার বাদী দীপু মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের বড় ভাই। দায়ের করা মামলায় দীপু চাঁদাবাজির জেরে হামলায় জড়িত হিসেবে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ের আসামি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ওরফে ইমনকে (৫২)। মামলার অন্য আসামিরা হলেন মুন্না (৪৭), আসিফ ঝন্টু (২৮), এ কে এম চঞ্চল (৪৩), শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সহযোগী খোকন (৪০), সাইদ আসাদ (৪১), জসিম ও কলা জসিম (৩৫), তুষার ওরফে কিলার তুষার (৩৫), তৌফিক এহসান (৬৩) ও মো. জাহিদ (৪৪)।

এ ঘটনায় মামলার ৩ নম্বর আসামি আসিফুল হক আসিফ ওরফে ঝন্টু (৩২) ও কাউসার মৃধা (২৪) নামে সন্দেহভাজন এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসিফ শরীয়তপুরের ডামুড্ডা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হক আকনের ছেলে। আর কাউসার ‍মৃধা পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের কিসমত শ্রীনগরের মোহাম্মদ হালিম মৃধার ছেলে।

মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে

নিউ মার্কেট থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে দলবদ্ধ হয়ে এসে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অন্য আসামিরা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন। আসামিদের চাঁদাবাজি ও হয়রানির বিরুদ্ধে বাদী ও অপর ভুক্তভোগী এহতেশামুল হকসহ আরও কয়েক জন ব্যবসায়ী আইনি সহযোগিতা গ্রহণসহ ব্যবসায়ী ও ছাত্র-জনতাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে অভিযুক্ত আসামিদের চাঁদাবাজি ব্যাহত হয়। মূলত এ কারণেই ভুক্তভোগী এহতেশামুল হকসহ রোষানলে পড়তে হয়। পরিকল্পিতভাবে আসামিরা পারস্পরিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ও প্ররোচনায় গত ১০ জানুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের পশ্চিম দিকে রাস্তার ওপর ধারালো ছোরা, চাপাতিসহ দলবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এতে এহতেশামুল হকের কাঁধের জয়েন্ট, ডান হাতের কনুই, ডান পায়ের হাঁটু, বাম পায়ের পাতাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক গুরুতর জখম হয়। ঐ সময় আমি নিচতলা (গ্রাউন্ড ফ্লোর) থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে আসতে থাকলে আসামিদের কয়েক জন গ্রাউন্ড ফ্লোরের গেটের ভেতরে ঢুকে আমাকে হত্যার উদ্দেশে আমার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আসামিদের কোপের আঘাতে আমার গাড়ির কাচসহ বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্তসহ আমার বাম পা কেটে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনতা এগিয়ে এলে আসামিরা ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

নেপথ্যে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর দ্বন্দ্ব!

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীর ওপর হামলার নেপথ্যে রয়েছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। যারা জেলে থাকতেই নিয়ন্ত্রণ করত অপরাধ জগত। গত ৫ আগস্টের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয় জন জামিনে মুক্তি পায়। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১৫ আগস্ট দুপুরে মুক্তি পান পুরস্কার ঘোষিত ২৩ সন্ত্রাসীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। আর ১৬ আগস্ট রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-৪ থেকে জামিনে মুক্তি পান অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। কারামুক্তির পর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেফতার হন তৎকালীন ছাত্রদলের নেতা পিচ্চি হেলাল। দীর্ঘ ২৪ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া শীর্ষ এ সন্ত্রাসীর বড় ভাই ওয়াহিদুল হাসান দীপু। যিনি গত ১০ জানুয়ারি আকস্মিক হামলার শিকার দুই ভুক্তভোগীর এক জন। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কয়েক জন শীর্ষ সন্ত্রাসী এতদিন দেশের বাইরে পলাতক ছিল। তারাও দেশে ফিরেছে।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য তত্পরতা শুরু করেছে। তাদের মধ্যে পিচ্চি হেলাল ও ইমন অন্যতম। তাদের সংস্পর্শে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে এসেছে। তারা অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের তৎপরতা দৃশ্যমান। গত ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে জোড়া খুন হয়। ঐ দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ঐ ঘটনা ঘটে। তবে ঐ ঘটনার পর চার মাসেও পিচ্চি হেলালকে গ্রেফতার করা যায়নি।

নির্বাচন নিয়ে বিরোধের সন্দেহ পুলিশের

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, এক মাস আগে ঐ মার্কেটে একটি নির্বাচন হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একটি বিরোধ তাদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। আমাদের ধারণা, এ নির্বাচনের কারণে ঘটনা হতে পারে অথবা অন্য কোনো কারণেই হতে পারে। তবে আসামিদের না ধরা পর্যন্ত মূল বিষয়টা আমরা এখনই বলতে পারব না। আমরা চেষ্টা করছি।

নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দিন বলেন, এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় গত রাতেই থানায় মামলা হয়েছে। মামলার উল্লিখিত ৩ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন এক আসামিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ফুটেজ ফরেনসিক করে আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার প্রধান আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত টিম কাজ করছে। পাশাপাশি ডিবিও কাজ করছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ধরা সম্ভব হবে।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

জানুয়ারির ১১ দিনে এলো ৮৮৩৯ কোটি টাকার রেমিট্যান্স