in ,

নায়ক রাজ্জাকের স্মরণীয় ১০ ছবি

রাজ্জাক বিচিত্র ধরনের চলচ্চিত্র ও চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত ছবির তালিকা বেশ দীর্ঘ। সেখান থেকে ১০টি সেরা বা স্মরণীয় ছবি বাছাই করা বেশ কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক যে ছবিগুলোর নাম বলেছেন তার ভিত্তিতেই এই তালিকা করা হয়েছে।

১ ) ছুটির ঘন্টা

১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ব্যতিক্রমী গল্পের এই ছবিটি। শিশুতোষ চলচ্চিত্র হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে ১২ বছর বয়সের এক ছাত্র। সেখানেই দীর্ঘ ১১ দিন কাটে তার। স্বজনদের প্রতিক্ষার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে করুনচিত্র।

ছবির মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছে শিশু শিল্পী সুমন। এর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন রাজ্জাক। যার মধ্য দিয়ে ছবির গল্প শুরু হয়। তার চরিত্রের নাম আব্বাস। তিনি দপ্তরীর ভূমিকায় অভিনয় করে মন জয় করেছেন সবার। ছবিটিতেও আরও আছেন শাবানা, সুজাতা, শওকত আকবর ও এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবিটির একাধিক গান জনপ্রিয়তা পায়। এরমধ্যে ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’, ‘একদিন ছুটি হবে’ অন্যতম।

২ ) রংবাজ

রাজা (রাজ্জাক) একটি বস্তি এলাকার রংবাজ, সে রংবাজি পকেটমারী সহ নানা ধান্দায় লিপ্ত থাকে সারাক্ষণ। ওই বস্তিরই মেয়ে মালা (কবরী) রাজাকে খুব ভালবাসে। একদিন রাজা এক চাকুরিজীবির (আনোয়ার হোসেন) পকেট মারে, লোকটা সেদিনই কেবল বেতন পেয়ে ফিরছিলো। এ কারনে পাওনা মিটাতে না পেরে লোকটাকে বাড়িওয়ালাসহ পাওনাদারদের কাছে চরম অপমান হজম করতে হয়।

অন্য একদিন রাজা পকেট মারতে গিয়ে জনতার তাড়া খেয়ে ওই লোকটার ঘরে তার স্ত্রী শিরিনের (রোজি) সাহায্যে বিপদমুক্ত হয়। শিরিনকে সে বোন সম্বোধন করে। অক্ষম স্বামীর অজান্তে রাজা মায়ের মতো বোনকে অনেক সাহায্য করে এবং শেষ পর্যন্ত নিজ বাসায় নিয়ে আসে। পরিশেষে সবাই জানতে পারে যে, রাজা একজন অসাধারন মনের মানুষ, যিনি প্রতিটি মানুষকে যথাযথ সম্মান করতে জানে।

১৯৭৩ সালে জহিরুল হক পরিচালিত ছবিটির মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন রাজ্জাক। ছবির ‘হৈ হৈ হৈ রঙিলা’, ‘সে যে কেন এলো না’ গান ‍দুটো এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

৩ ) নীল অাকাশের নিচে

এমন একটি ছবি যার সবগুলো গান হিট তকমা পেয়েছিলো। এখনও গানগুলো নতুন। ‘হেসে খেলে জীবনটা’, ‘নীল আকাশের নীচে আমি’, ‘গান হয়ে এলে’ ও ‘প্রেমের নাম বেদনা’। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। কাহিনীকার ইসমাইল মোহাম্মদ। পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। তৎকালীন বাঙালি পরিবারের গল্পই ছবিটির প্রধান উপজীব্য বিষয়। ছবিতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক ও কবরী। আরও আছেন আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ প্রমুখ।

৪ ) জীবন থেকে নেয়া

নানা কারণে ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ। ‘একটি দেশ, একটি সংসার, একটি চাবির গোছা, একটি আন্দোলন, একটি চলচ্চিত্র…’- এমন স্লোগান দৃষ্টি কেড়েছিলো সিনেমাপ্রেমীদের। রাজ্জাক যাকে খুব বেশি অনুসরণ করতেন, সেই জহির রায়হান পরিচালিত ছবি এটি। এটিই তার শেষ ছবি। মুক্তি পায় ১৯৭০ সালে। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। দেশাত্মবোধের ছবি হিসেবে এটি উদাহরণ তৈরি করে।

এই ছবিতে ‘আমার সোনার বাংলা গানটি’ চিত্রায়িত হয়েছিলো, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এছাড়া ছবির অন্য গানগুলো হলো ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’, ‘কারার ওই লৌহকপাট’ ও ‘ এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’।

৫ ) আলোর মিছিল

নায়করাজের প্রিয় নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। তারই ছবি ‘আলোর মিছিল’। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এতে রাজ্জাকের পাশাপাশি আরও ছিলেন ববিতা, ফারুক, সুজাতা প্রমুখ। সংগীত পরিচালনা করেন খান আতাউর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছবির মাধ্যমে ববিতা প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান ববিতা। ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘এই পৃথিবীর পরে’ গানটি বেশ সমাদৃত হয়।

৬ ) ময়নামতি

রাজ্জাক অভিনীত ‘ময়নামতি’ ছবিটি উল্লেখযোগ্য অন্য কারণে। এটি তার একমাত্র ছবি যা রিমেক হয়েছে। ‘ময়নামতি’ রিমেক হয় ‘অনেক সাধের ময়না’ নামে। ২০১৪ সালে ছবিটি মুক্তি পায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে। রাজ্জাক-কবরীর স্থলাভিষিক্ত হন বাপ্পি ও মাহি। ছবিটির প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন রাজ্জাক ও কবরী। কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’র রিমেক করেন জাকির হোসেন রাজু। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পেয়েছিলো ছবিটি। ‘ময়নামতি’র ‘অনেক সাধের ময়না আমার’ ও ‘ডেকোনা আমারে তুমি’ গানগুলো এখনও সমান জনপ্রিয় ।

৭ ) অনন্ত প্রেম

‘আকাশ যতোদিন থাকবে, এই পৃথিবী যতোদিন থাকবে, আমি যে তোমারই থাকবো- ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অনন্ত প্রেম’ ছবির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছিলো এই কয়েকটি লাইন। সমাজ থেকে পলাতক একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার শপথ ছিলো এটি। এ শপথেরই আরেক নাম ‘অনন্ত প্রেম’। ছবিটি প্রথাগত ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। রাজ্জাক-ববিতা জুটির দারুণ হিট ছবি এটি। সঙ্গে ছিলেন আনোয়ারা, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামান, ব্লাক আনোয়ার প্রমুখ। অনন্ত প্রেম সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করেন আজাদ রহমান।

জনপ্রিয় এ ছবির মাধ্যমে পরিচালক রাজ্জাকের আত্মপ্রকাশ। ‘অনন্ত প্রেম’ বিয়োগান্তক প্রেমের ছবি। গল্পের শেষে নায়ক-নায়িকা দু’জনই মারা যায়। বর্ডার পার হয়ে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় তারা। ছবির শেষ দূশ্যে মরতে মরতে নায়ক নায়িকাকে চুম্বন করে। ১৯৭৭ সালে বিষয়টা এতো সহজ ছিলো না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো সিম্বলিক চুম্বন ছিলোটা সেটা। তখনকার বিখ্যাত সিনে পত্রিকা চিত্রালী সেই চুমুর কালার ছবি শেষের পাতায় অর্ধেকটা জুড়ে ছেপে ‘ঢাকার ছবিতে চুমু এলো’ শিরোনামে স্টোরি করেছিলো।

৮ ) বেঈমান

রাজ্জাক অভিনীত আলোচিত ও সফল ছবি ‘বেঈমান’। তার নায়িকা ছিলেন কবরী। ছবিটি এখনও অনেকের প্রিয়। গানুগলোও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ‘বেঈমান’ পরিচালনা করেন রুহুল আমিন। ২০১৩ সালে ছবিটি রিমেকের ঘোষণা এসেছিলো রাজ্জাকের পরিবার থেকে। পাশাপাশি তারা এও বলেছিলেন, ঠিক রিমেক নয়, ‘বেঈমান’ নামটি নিয়ে নতুন গল্পের ছবি তৈরি করবেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

৯ ) বড় ভালো লোক ছিলো

‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’ কিংবা ‘তোরা দেখ দেখরে চাহিয়া’ গানগুলো যারা শুনেছেন তারা জানেন ছবিটির নাম। ‘বড় ভালো লোক ছিলো মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এটি রাজ্জাককে অভিনেতা হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেয়। পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। ছবিটিতে তার সহশিল্পী ছিলেন প্রবীর মিত্র, অঞ্জু ঘোষ ও সাইফুদ্দিন আহমেদ।

১০ ) স্বরলিপি

‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুগ যুগ ধরে গানটি সৌরভ ছড়াচ্ছে। রাজ্জাক অভিনীত ‘স্বরলিপি’ ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিলো এটি। এতে তার নায়িকা ছিলেন ববিতা। ছবিটি পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘স্বরলিপি’। একই বছরে রাজ্জাক অভিনীত আরও অন্তত ১০টি ছবি মুক্তি পায়। ‘স্বরলিপি’ ছবিটি উত্তম কুমারের ‘দেয়া নেয়া’ ছবির অনুকরণে তৈরি বলে অভিযোগ রয়েছে।

Report

What do you think?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

ক্রিকেট ইতিহাসে শীর্ষ ১০ ফাস্ট বোলার

সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন যে সব তারকারা