ধর্ষণ মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা
বেশিসংখ্যক মানসম্মত ল্যাব স্থাপন করুন!
২০২০ সালে সিলেট ও নোয়াখালীতে দলবদ্ধ ধর্ষণের দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তৎকালীন সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করে এবং ধর্ষণের মামলার আসামি শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় ধর্ষণ মামলাগুলোর কাজ এগোচ্ছে না। এর ফলে ভুক্তভোগীদের বিচার পেতেও দেরি হচ্ছে।
সারা দেশে আটটি বিভাগীয় স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ পরীক্ষার আলামত সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকলেও একমাত্র ঢাকায় প্রোফাইলিং হয়। সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুরে অবস্থিত সাতটি ল্যাব শুধু নমুনা সংরক্ষণ করে। সাতটি ল্যাব নমুনা সংরক্ষণ করে প্রোফাইলিংয়ের জন্য পাঠায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভবনের ১১ তলায় স্থাপিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে (এনএফডিপিএল)।
এই পুরো কার্যক্রম চলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’ নামের প্রকল্পের আওতায়। এখানে এসেই ধর্ষণসহ অন্যান্য কারণে লোকজনের দেওয়া ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা, জনবল-সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষার ব্যবস্থা কম থাকায় ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হচ্ছে ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে।
এনএফডিপিএলের বিভিন্ন বছরের ডিএনএ পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলার ৯২ শতাংশ ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে জট তৈরি হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে ৭৮৭টি, ২০২৩ সালে ৭১১টি এবং ২০২৪ সালে ৫৯৩টি ধর্ষণ মামলার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২০২২ সালের প্রতিবেদন দেওয়াই শেষ হয়নি। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ১ হাজার ৩০৪টি পরীক্ষার মধ্যে মাত্র ১০০টির মতো প্রতিবেদন দিতে পেরেছে ল্যাব।
কোনো কোনো থানায় গত এক-দেড় বছরের মধ্যে ধর্ষণের মামলাগুলোর কোনো ডিএনএ প্রতিবেদন পৌঁছায়নি। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন ছাড়া অনেক থানার পুলিশ ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দিতে চায় না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই মামলাগুলো থেমে আছে।
ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অপরাধের বিচার যতটা দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন হওয়া উচিত। বিচার সম্পন্ন হতে দেরি হলে সেটা ভুক্তভোগীদের জন্য বহুরকম বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। কিন্তু ধর্ষণের মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ দেখা যাচ্ছে সহজে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া।
এ রকম অবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দ্রুত দেওয়ার জন্য আরও বেশিসংখ্যক মানসম্মত ল্যাব স্থাপন, যথাযথ প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings