in

দিনাজপুরে ৭০০ কোটি টাকার লিচুর বাজার, জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে নতু

লিচুর জন্য বিখ্যাত জেলা দিনাজপুর। যেখানকার উৎপাদিত লিচু স্বাদ, গন্ধ, রসালো ও মিষ্টতায় ভরপুর। এই জেলার লিচু দেশব্যাপী বিখ্যাত ও সমাদৃত। এই সময়টাতে ভরপুর বাজার জমে উঠেছে জেলার কালিতলা এলাকায়। যেখানে লিচু কিনতে এসে তৃপ্তির কথা জানালেও কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনা দাম কম। এরপরও এই বছরে জেলাতে ৭০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কৃষি বিভাগ।

এবার দিনাজপুরের উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচুকে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যাতে এই লিচুতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। বিদেশে রফতানির উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে, এই জেলাতে পাঁচ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগানে উৎপাদিত হবে ২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু। যেটি সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাগানগুলোর গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে টসটসে লাল লিচুতে ভরে উঠেছে। 

শুধু বাগানগুলোতেই নয়, এখন বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে শুরু হয়েছে লিচুর আমদানি। এই জেলায় মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদেনা, চায়না থ্রি, হাড়িয়া, কাঁঠালি, মোজাফফরী জাতের লিচুর উৎপাদন হয়। তার মধ্যে এবারে এই জেলার উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচু স্বাদ, গন্ধ ও মিষ্টতায় ভরপুর হওয়ায় এই লিচুর চাহিদা একটু বেশিই। তবে গত বছরের তুলনায় এবারে দাম কম, যাতে খুশি ক্রেতা সাধারণ।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, এবার বোম্বাই জাতের লিচু শ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩৫০, মাদ্রাজী জাতের লিচু ২০০-২৫০, বেদেনা জাতের লিচু ৬০০-৮০০, চায়না থ্রি জাতের লিচু ১৩০০-১৫০০, হাড়িয়া জাতের লিচু ৭০০-৯০০, কাঁঠালি জাতের লিচু ৬০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরে এই সময়ে লিচুর দাম বেশি ছিল। যদিও কয়েকদিন ধরেই লিচুর দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। 

ঢাকা থেকে দিনাজপুরে একটি কাজের উদ্দেশে এসেছেন আক্কাস আলী। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় বাচ্চারা বলেছে লিচু নিয়ে যেতে। এই বাজারটি আমার চেনা নয়, তারপরও জিজ্ঞাসা করতে করতে এই বাজারে এসেছি। ৫০০ লিচু নিয়েছি, নিজে খাবো এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেবো।

ঢাকা থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি বেদেনা জাতের লিচু নিলাম ১০০টি ৫৫০ টাকায়। আমার কাছে দামটা বেশি মনে হয়েছে। এরপর স্থানীয়রা জানালেন গত বছরে এই জাতের লিচু এই সময়ে ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাতে করে মনে হলো লাভই করেছি।

রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আসা ক্রেতা ফরিদুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুরের লিচুর স্বাদই আলাদা। তাই বেদেনা, মাদ্রাজি ও চায়না থ্রি জাতের ৩০০ লিচু নিয়েছি। বেদেনার স্বাদ অতুলনীয়। অন্যগুলোও ভালো। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে, তাই আগ্রহ আরও বেড়েছে।

কালিতলা ফল বাজারের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবসময় বেশি। তবে গত বছরে প্রচণ্ড রোদের কারণে আমরা ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারিনি। লিচু কিনে ঢাকায় পাঠাতে পাঠাতেই অর্ধেক লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এবারে ব্যবসা করে সুবিধা হচ্ছে, লিচু নষ্ট হয়ে যাওয়ার হার কম। সেই সঙ্গে দামও কম।

কালিতলা ফল বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বাজারে এবারে দাম কম হলেও ঈদের পর দাম বেড়ে যাবে। তাছাড়া আমরা যারা লিচু ঢাকাতে পাঠাই তাদের অনেকেই তো উত্তরাঞ্চলের। তারা এই এলাকাতে এসে লিচু ক্রয় করবেন এমন মনে করায় অনেকেই লিচু কিনছেন না। আর কয়েকদিন পর তো লিচুর আমদানিও কমে যাবে।

গাজীপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী রহিম বাদশা বলেন, এবারে বাজারে আমদানি বেশি। এ জন্য একটু দাম কম। তাছাড়া সামনে ঈদ, গরু ক্রয় ও ঈদের কেনাকাটা নিয়েই মানুষ বেশি ব্যস্ত। এখান থেকে লিচু বেশি দামে নিয়ে গেলেও ঢাকায় কম দামে বিক্রি করতে হবে। চাহিদা যেমন, সেই দামেই কিনছি। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কম। 

লিচু বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারে আবহাওয়া ভালো তাই ফলনও ভালো হয়েছে। দাম কম হলেও খুশি যে এবারে লিচু রোদের কারণে নষ্ট হয়নি। তাই গত বছরের তুলনায় লাভ হবে।

মাসিমপুর এলাকার লিচু চাষি সুমন মহন্ত বলেন, এবারে দাম খুবই কম। তবে ফলন ভালো হয়েছে। এখন ঝড় হচ্ছে, এ জন্য ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকেই লিচু নিয়ে আসছেন। এ জন্য আমদানি বেশি। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই এই আমদানি কমে যাবে। 

একই এলাকার কৃষক নয়ন ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি ছিল লিচুকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিদেশে রফতানি করা। এবারে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে, কিন্তু বিদেশে রফতানি এখনও হয়নি। যদি এই লিচু বিদেশে রফতানি হয় তাহলে আমাদের লাভ হবে, দাম বেশি পাবো। তাই সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।

বিরল উপজেলার বটেরহাট থেকে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের লিচু এখন বিশ্ব স্বীকৃত- এটি অনেক খুশির। তবে যদি বিদেশে রফতানি হয় তাহলে খুশির পাশাপাশি লাভও হবে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, যাতে করে এই লিচু বিদেশে রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তাহলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবো। 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আনিছুজ্জামান বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগ ছিল না, পোকামাড়কের আক্রমণও ছিল না। এ জন্য উৎপাদন বেশি হয়েছে। লিচুর উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং দামও ভালো রয়েছে। ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এই জেলার উৎপাদিত বেদেনা জাতের লিচু জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় দিনাজপুরের সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এই জেলার লিচু বিদেশে রফতানি করলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন। এ বছর যে পরিমাণে লিচুর উৎপাদন হয়েছে তাতে করে আবহাওয়াসহ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কৃষকদের ঘরে যাবে ৭০০ কোটি টাকা।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

ঈদে চিঠি বিনিময়: মোদি-ইউনূসের বার্তায় ভ্রাতৃত্ব না কৌশল?

বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার, কমেছে নতুন নিয়োগ!