তালিকায় হাসিনাপুষ্ট দশ প্রতিষ্ঠান অন্তরায় শুধু আইনের ভুল প্রয়োগ
অর্থপাচার ব্যর্থ করবে টাস্কফোর্স
লন্ডারিংয়ের গল্প প্রচার হয়। আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে পাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশি অর্থ। কিন্তু কারা পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, জানা যেতো না। হাসিনা আমলে প্রশাসনযন্ত্রের সহযোগিতা ব্যতীত অর্থপাচারের চেইন তৈরি করা সম্ভবও ছিলো না। অথচ রাষ্ট্রযন্ত্রের কারা, কিভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছেন-মানুষকে সেটি জানানো হতো না। অর্থ পাচার রোধে দায়ের হতো খুচরো কিছু মামলা। সেই মামলায়ও নেই কোনো সাফল্য। তবে তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে দুদক-সিআইডি’র টানা-হেঁচড়াই শুধু প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। যদিও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে আর্থিক খাতে ধসের প্রধান কারণই ছিলো অর্থ পাচার। এবার অর্থ পাচার ব্যর্থ করতে নেয়া হয়েছে জোর উদ্যোগ।
সম্প্রতি হস্তান্তরিত ‘শ্বেতপত্র’র বদান্যতায় জানা গেলো, হাসিনার আমলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। এ হিসেবে পাচারকৃত অর্থের অঙ্ক ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। প্রধান উপদেষ্টার হস্তগত শ্বেতপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ১ ডিসেম্বর প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে কীভাবে অর্থ পাচার হয়েছে, তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের লুটপাটের চিত্র ভয়াবহ। অনেকেই এর বৈধতা দিতে চেয়েছে। এসব ঘটনাকে আতঙ্কজনক বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। লুটপাটের এই ঘটনাগুলো টেক্সটবুকে আসা উচিৎ, যেন নতুন এবং পরবর্তী প্রজন্ম লুটপাটের বিষয় জানতে পারে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এই ব্যয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে। টাকা চুরি করে কোথায় নিয়ে গেছে সেটা বের করা এবং টাকা দেশে ফেরানোই সরকারের লক্ষ্য।
এর আগে গত ২ নভেম্বর ‘দুদক সংস্কার কমিশন’র প্রধান ড.ইফতেখারুজ্জামান জানান, ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করেই পাচার করা হয়েছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে ব্যাংক,আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ-বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে। দেশের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়া ঠেলে দেয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে হাসিনার শাসনাধীন বাংলাদেশ ব্যাংক।
ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে দুর্নীতি বন্ধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা। প্রতিশ্রুতি পূরণে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৯ সংস্থার সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড.আহসান এইচ মনসুর। টাস্কফোর্সের কাজই হচ্ছে বিদেশে পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ম্যানেজমেন্ট। টাস্কফোর্সের সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন বিএফআইইউ’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক একেএম এহসান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ,আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর,এনবিআর’র সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি)র একজন করে প্রতিনিধি টাস্কফোর্সের সদস্য।
উক্ত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে ১০/১২টি শিল্প গ্রুপ এবং একক ব্যক্তিকে ‘অর্থ পাচারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ তালিকায় রয়েছে হাসিনা পরিবারের অর্থের বড় যোগানদাতা এস.আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ,বেক্সিমকো গ্রুপ, বিদ্যুৎখাতে অর্থ লোপাটকারী সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, কাজী নাবিল আহমেদের জেমকন গ্রুপ, টেক্সটাইল খাতের নোমান গ্রুপ এবং সিকদার গ্রুপ। একক ব্যক্তি হিসেবে রয়েছেন আ’লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নাম। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় কি সম্ভব তাদের পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ ফেরত আনা?
আইনের ভুল ব্যাখ্যাÑভুল প্রয়োগ
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় অসম্ভব প্রায়। বিগত সময়গুলোতে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার যেসব কারণ রয়েছে সেই কারণগুলো যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি শ্রুতিমধুর হলেও কথার ফুলঝুরি মাত্র। কিন্তু কেন?
দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসা প্রশ্নে এর আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনজ্ঞ মো: দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, মানিলন্ডারিংয়ের কনসেপ্ট এসেছে ২০০৭-২০০৮ সালের দিকে। এর আগে মানিলন্ডারিংয়ের আইডিয়াটা ছিলো ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট’ ১৯৪৭ এ। এটিকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিদ্যমান আইনগুলো ছিলো ‘কম্পিটিটিভ অ্যাক্ট’। এনবিআর, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিভিশন,বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এগুলো দেখভালের জন্য সম্প্রতিককালে সৃষ্টি হয় বিএফআইইউ। কিন্তু তাদের সক্রিয়া না থাকা, আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় ‘ভাইটাল প্লেয়ার’ ছিলো মানিলন্ডারিং মামলায় মেটারিয়াল উইটনেস ছিলো, বাংলাদেশ ব্যাংক কন্ট্রোল অব ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট, কন্ট্রোল এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) কম্পিটিটিভ প্রাইস কমিশন এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন। এদের ‘আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস’র যে গল্পটি আমরা দেখি কিংবা প্রসিকিউশন স্টোরিতে আমরা আনি এটিকে জাস্টিফাই করার জন্য উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাইটাল উইটনেসের মেটারিয়াল এভিডেন্স বিফোর দ্য কোর্ট-সম্পূর্ণ রূপে ইগনোর করা হয়েছে। একটি মামলায়ও এনবিআর সাক্ষী নেই। প্রাইস কম্পিটিটিভ কমিশনও সাক্ষী নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সাক্ষী নেই। বিএফআইউ সাক্ষী নেই। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন সাক্ষী নেই। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো সাক্ষী নেই।
‘কিন্তু আমরাতো দেখলাম, বেশ কয়েকবার এন্টিমানিলন্ডারিং অ্যাক্টকে সংশোধন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন পাচার রোধ করা যাচ্ছে না? পাচাকারীদের অভিযুক্ত এবং বিচার করা যাচ্ছে না? কী সুফল হয়েছে এতে?’ জবাবে তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টে যা ছিলো এটিতে যদি সাজার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। স্পেশালাইজড কোর্টতো আছেই। সেগুলোর যদি সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়। সেটিই যথেষ্ট। তখন আর মানিলন্ডারিং অ্যাক্টের প্রয়োজন হয় না। পদাধিকারবলে সেশন জজ, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে কাজ করবে।
‘তাহলে কি আমরা মানিলন্ডারিং রোধে ভুল পথে এগোচ্ছি?’ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি মনে করি এখানে কম্প্রিহেনসিভ অ্যাফোর্টের দারুণ ঘাটতি রয়েছে। দক্ষ জনশক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। এবং যারা ভাইটাল ম্যাটেরিয়াল উইটনেস ডকুমেন্ট ছিলো তারা থাকছেন সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’। অধিকাংশ মানি লন্ডারিং মামলায় শুধুমাত্র মোরাল কনভিকশন দেয়া হচ্ছে। মূলত: অপরাধের শাস্তি নেই।
যে সাজার মেয়াদটা আছে এটিকে সাবস্টিটিউট করলেই হয় ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশনে লন্ডারিংয়ে বিচার সম্ভব। এ আইনটি দুদক আইনের শিডিউলে ইনসার্ট করে দিলেই হয়। সাজার মেয়াদটা বাড়ালেই হয়..।
‘বিদ্যমান আইন পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ কি ফেরত আনা সম্ভব?’-প্রশ্নে এ আইনজ্ঞ বলেন, সম্ভব নয়। কারণ ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন কিংবা কনভেনশন সেগুলো হয়েছে এগুলো বাইন্ডিং ফোর্স নয়। বাইন্ডিং অ্যাফেক্ট নেই। এখন যদি যেসব দেশে অর্থ জমা আছে, রক্ষিত আছে, ওইদেশের সহযোগিতা ব্যতীত ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)’ দ্বারা আনা সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয় সেটি বলছি। এখন প্রত্যেকটা দেশে পারমানেন্ট রেসিডেন্স (পি.আর) এবং সিটিজেনশিপ দেয়ার জন্য যে গোল্ডেন স্কিমগুলো বিভিন্ন দেশ চালু করেছে, এগুলো যদি আন্তর্জাতিক পরিষদে কম্বিনেশন কিংবা যুগোপযোগী না করে যদি ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের মাধ্যমে না আনেন তাহলে আনা সম্ভব নয়। কারণ ওইদেশে সরকার অনুমোদিত প্রকল্পে পাচারের অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ফেরত না দিলে অর্থ-সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন, মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’। এটি সরকার অনুমোদিত প্রকল্প। সরকার নিজে চালায়। পি.আর. সরকার অনুমোদিত প্রকল্প। ওই দেশের সরকার কেন তাদের স্বার্থ আপনার কাছে বিক্রি করে দেবে? সেটি তারা করবে না। এ কারণে যদি পি.আর. এর বিষয়ে, সিটিজেনশিপের ব্যাপারে, প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্টের (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট)র ব্যাপারে ওইদেশের সঙ্গে বোঝাপড়া না করা যায় তাহলে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা যাবে না।
‘আমরা কি শুধু শুধু শক্তি-অর্থ ব্যয় করছি? শুধু শুধুই কি বলছি, যে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনবো? ফেরত আনা টাকা দিয়ে দেশ চালাবো। এটি কি তাহলে নিছক রেটরিক?’ এ প্রশ্নে অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি সন্দিহান। এসবই কথার ফুলঝুরি। অবাস্তব।
আমি তিনটি ক্ষেত্রে বললাম। এই তিনটি খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা যে দেশগুলোতে টাকা আছে সেসব দেশ কখনো টাকা ফেরত দেবে না। আপনি যতই দাবি করুন, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনের কথা বলুন, এন্টিকরাপশন কনভেনশনের কথা বলুন, এমএলএআর’র কথা বলুন- টাকা ফেরত আসবে না। কখনোই আসবে না। সম্ভবও নয়।
‘আমরা যেটিকে অপরাধ হিসেবে দেখছি, সেসব দেশ সেই পাচারকে লেজিটেমিসি দিয়েছে। এখন শুধুমাত্র আমাদের এখান থেকে অর্থ পাচার হয়েছে, আমরা এটিকে লন্ডারিং বলছি। ওদের দেশের জন্যতো এটি ইনভেস্টমেন্ট।’ জবাবে তিনি বলেন, আমি সেটাইতো বললাম। ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প হচ্ছে মালয়েশিয়ার ‘ট্যুরিজম এবং সিভিল এভিয়েশন’ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত স্কিম। তাহলে টাকা কেন ফেরত দেবে? ১ লাখ ডলার দিলেন মালয়েশিয়ায় পি.আর. পাওয়ার জন্য। তাহলে টাকাটা কেন ফেরত দেবে? তিন খাতে বিনিয়োগকৃত টাকাও ফেরত আসার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে রেগুলেটরি বডি, তাদের সিদ্ধান্তহীনতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে টাকা পাচার হয়েছে। পরিষ্কার কথা। তিন খাতের বাইরে মালয়েশিয়ায় যে টাকা পাচার হয়েছে, সেটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে। পলিসি মেকাররা দায়ী।
পিকে হালদারের কথাই ধরুন। সেখানে সে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তার ওই দেশে শাস্তি হয়েছে। অবশিষ্ট সাজা তিনি যে বাংলাদেশে এসে ভোগ করবেন, টাকাটা ফেরত দেবেন, সেটির কোনো বিধান আছে বাংলাদেশের আইনে? নেই। তাহলে কেন করলেন না? ভারতের আছে। পাকিস্তানের আছে। সব দেশেরই আছে। বাংলাদেশ কেন করলো না? যশোরের একটি ছেলে ছিলো তিহার জেলে। সেটি ছিলো খুনের মামলা। যাবজ্জীবন হয়েছিলো তার। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবশিষ্ট সাজা এদেশে ভোগ করার নির্দেশ এসেছে ইন্ডিয়ান আইনে। ভারতীয় আইন আমাদের ফলো করতে হচ্ছে। ওই শর্তে তাকে এদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট সাজা ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারে এক গভর্ণর আরেকজন হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। ওই দেশের প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ শুধু ওই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে রেখে দিচ্ছে। ‘ভারতের আইন প্রতিপালনে আমরা বাধ্য কেন?’ এ জবাবে বলেন, আপনি যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি করেছেন। এ কারণেই সেদেশের নির্বাহী আদেশ মানতে আপনি বাধ্য। সারা পৃথিবী এ বিষয়ে আইন করেছে। বাংলাদেশ করেছে ‘নির্বাহী আদেশ’।
অর্থপাচার বিচারে ব্লেইম-গেম :
‘আমরা দেখছি-অর্থ পাচার মামলায় ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছে। প্রসিকিউটররা বলছেন, মামলার তদন্ত যথাযথভাবে হয় না বলেই অর্থ পাচার অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার বাদী কিংবা তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, প্রসিকিউটরগণ সঠিকভাবে কোর্টে মামলা উপস্থাপন করতে পারছেন না। ব্লেইমগেম।’ জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, ব্লেমগেইমতো হবেই। এটি কারণ হচ্ছে, দক্ষ লোকের ঘাটতি।
‘এটি কি শুধুই দক্ষ লোকের ঘাটতি? নাকি সদিচ্ছা এবং আইনগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে?’ জবাবে বলেন, আইনগত বিষয়টিতে পরে আসুন। দক্ষ লোক যদি থাকতো, এগুলো অনেক আগেই সংশোধন হয়ে যেতো। সদিচ্ছা হয়তো আছে। কিন্তু ম্যাটারিয়ালাইডজ অ্যাফেক্ট দেয়ার মতো দক্ষ লোক বা জনসম্পদ সৃষ্টি হয়নি।
যতক্ষণ পর্যন্ত না মিনিস্ট্রি অব হোমের এক্সট্রাডিশন যেমন দুদকের ক্ষেত্রে, মানিলন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনে অ্যামবার্গো, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট জব্দ বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষমতা কিন্তু পুলিশ হিসেবে দুদককে দেয়ার কথা। দুদক সেই ক্ষমতা আদায় করতে পারেনি। আটকের ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডিজির। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের সেটি করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু করে না। আদালতের অনুমোদনক্রমে পাসপোর্ট জব্দ করার ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু দুদক সেটি এক্সারসাইজ করে না। দুদক করে কি, দু-তিন দিনের জন্য একটি আদেশ দেয় পাসপোর্ট কিংবা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। এটির কি দুই পয়সার মূল্য আছে? পাসপোর্ট অর্ডারেই বলা আছে পুলিশ অফিসার (দুদক) দুদিন-তিন দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। দুদক সেটি করে না কেন? কোর্টের কাছে যাচ্ছে কেন? নিজেইতো পারেন।
‘এসব সম্ভবত উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জড হয়েছিলো। এ কারণেই হয়তো দুদক এটির চর্চা করছে না।’ এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, মোটেই না। কোনো চ্যালেঞ্জ হয়নি। এসব নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। ‘ইমপাউন্ডিং’! এ শব্দই হয়তো দুদক শোনেনি। অর্থাৎ আটক করে রাখা। গ্রামে ছাগল যখন ফসল খেয়ে ফেলে তখন ছাগলটিকে খোয়াড়ে আটকে রাখা হয়। ছাগলের মালিক যখন টাকা দেন, তখন ছাগলটি ছেড়ে দেয়া হয়। এ ব্যবস্থাপনার জন্য খোয়াড়ের মালিক স্থানীয় সরকার থেকে লাইসেন্স নেয়। ইম্পাউন্ডিংয়ের ক্ষমতাতো দুদকের রয়েছে। কিন্তু সেটির চর্চা করে না। সিআরপিসিতে এটি দেয়া আছে। পাসপোর্ট অফিসেও আপনি (দুদক) হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু করে না। দুদক যাচ্ছে আদালতে। এটির প্রয়োজন নেই। এসব নিয়ে যদি খোলামেলা ডিবেট হতো তাহলে হয়তো বোঝা যেতো কোন্ জায়গায় সঙ্কট। আমরটাতো একতরফা শুনছেন। যারা বিশিষ্ট এবং বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তাদেরটা শুনলে বলা যেতো সমস্যাটা কোথায়? আপনিতো করেই যাচ্ছেন, কিন্তু কাউন্টার আইনটি কোথায়? সবই আছে, আপনি খুঁজে নিতে পারছেন না। চর্চা করতে পারছেন না। সব ক্ষেত্রে মিস অ্যাপ্লিকেশন করছে। মিস ইন্টারপ্রিটিশন করছেন।
‘এটিই কি সার্বিক ব্যর্থতার কারণ?’ তার জবাব, আমিতো মনে করি, আইন যথেষ্ট পরিমাণ আছে। কিন্তু প্রোপার এক্সারসাইজ, ডিউস ডিলিংস এবং কেয়ারের অভাবে এক্সারসাইজ হচ্ছে না। যোগ্য ও দক্ষ লোকের পুনর্বাসন নেই। তারা সেখানে উপেক্ষিত। এতো উচ্চ আশা করেন কেন?
‘তাহলে টাক্সফোর্স কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে, আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। অমুকের সঙ্গে কথা হয়েছে, তমুক দেশের সঙ্গে কথা হয়েছে, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যাবে। এগুলো কিভাবে বলছেন তারা?’
জবাবে বলেন, এশিউরেন্স এবং ইন্স্যুরেন্স কি এক জিনিস? প্রিমিয়াম না দিলে ইন্স্যুরেন্স হবে? কিস্তির টাকা যদি না দেয়া হয় তাহলে কি পলিসির টাকা পাওয়া যাবে? এশিউর করলেই কি এটি ‘ইন্স্যুরেন্স’ হলো? একটি কথা বলি। বাংলাদেশ ব্যাংক শূন্য। ক্রিয়েটিভিটি, ইনোভেটিভ ক্যারেক্টার অনেক বেশি দরকার। লেখাপড়া ছাড়া কি করা যায়? রেগুলেটরি বডির বক্তব্য না দিয়ে মানিলন্ডারিং মামলায় চার্জশিট দিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার ক্ষেত খেয়ে ফেললো, তাকে বাদ দিয়েই মামলা করে ফেলছেন। তাহলে অর্থ পাচার মামলার প্রমাণটি কেমন করে হবে?
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings