in

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ হলে বাংলাদেশের রপ্তানি দশমিক ৫ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা করা পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ও ইউনাইটেড নেশন্স ইউনিভার্সিটির ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস রিসার্চের পরিচালক কুনাল সেনের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গ্লোবাল ট্রেড অ্যানালাইসিস প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের একটি সারমর্ম যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশনে ২ মে প্রকাশিত হয়েছে।

দুই অর্থনীতিবিদের এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ না হয়ে বিদ্যমান শুল্ক বহাল থাকলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জিডিপিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। উল্টো রপ্তানি ১ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের প্রভাবে বিশ্বের সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো প্রাথমিকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক গাণিতিক মডেলিং ব্যবহার করে এই গবেষণা করা হয়েছে।

উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র, থামে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

গবেষণার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাজ্যের কনভারসেশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের শ্রম সস্তা। তাই যেসব দেশ বা কোম্পানি চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেবে, তার সুযোগ এই দেশগুলো শুরুতে হয়তো নিতে পারবে। কিন্তু পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হলে এসব দেশ নতুন সুবিধা হারাবে। গবেষণায় গাণিতিক হিসাবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। আর ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এই প্রভাব দেখা যাবে।

গবেষণায় দুই অর্থনীতিবিদ মূলত দুটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করেছেন। প্রথম ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক স্থগিতের অবস্থা বিবেচনায়। তবে পাল্টা শুল্ক স্থগিত থাকলেও সব দেশের পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে একটি হিসাব করা হয়েছে। দ্বিতীয় হিসাবটি করা হয়েছে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে, সেই বাস্তবতা বিবেচনায়। বাংলাদেশের রপ্তানি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবেও এই দুটি ক্ষেত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

গবেষণায় সেলিম রায়হান ও কুনাল সেন দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে বিশ্বজুড়ে রপ্তানির ধারা বিকৃত হবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। পাল্টা শুল্ক আরোপ হলে চীনের রপ্তানি ১০ দশমিক ৮ শতাংশ সংকুচিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হবে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।

রপ্তানির পাশাপাশি জিডিপিতে কী প্রভাব পড়বে, তা–ও এই গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং চীনের জিডিপি ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমতে পারে। এ ছাড়া উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জিডিপির ক্ষতি হতে পারে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ও ১ শতাংশ। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যথাক্রমে থাইল্যান্ড (১ শতাংশ), মালয়েশিয়া (০.৯ %), ব্রাজিল (০.৯ %), ভিয়েতনাম (০.৯ %)। এশিয়ার মতো লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও সাব-সাহারা আফ্রিকার মতো দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যদিও এই দেশগুলোর কোনোটিই বাণিজ্যযুদ্ধের পক্ষ নয়।

করণীয় কী

এই দুই গবেষক মনে করেন, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত রপ্তানির বহুমুখীকরণ করা। এ জন্য কার্যকর একটি ব্যবস্থার উদাহরণ হতে পারে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ। এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত শুল্ক, বন্দর ব্যবস্থাপনা ও লজিস্টিকস সেবার উন্নতি ঘটানো। এতে যেমন ব্যবসার খরচ কমবে, তেমনি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। তখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্কের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি দুর্বল। এই ধাক্কা মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার হবে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো গেলে এই ধাক্কা সামলানো সহজ হবে।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, পাল্টা শুল্কের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে, তার ধাক্কা কী হবে, সেটা এই গবেষণায় তুলে আনা হয়নি। ফলে পাল্টা শুল্কের প্রভাব শুধু গবেষণার ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ট্রাম্প হয়তো একেক দেশের সঙ্গে একেক ধরনের চুক্তি করবেন। ফলে বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থা আরও বিকৃত হবে। এসব অনিশ্চয়তার প্রভাব কী হবে, তা আমরা এখনই বলতে পারি না। অর্থাৎ সার্বিকভাবে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

তবে গবেষকেরা মনে করেন, যেসব দেশের অর্থনীতি বহুমুখী, যাদের শক্তিশালী আঞ্চলিক যোগাযোগ ও শক্তিশালী বাণিজ্য কাঠামো আছে, সেই সব দেশের পক্ষে এই ধাক্কা সামলানো সহজ হবে।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

ভারতের পর এবার পাকিস্তানে গেলেন সৌদির মন্ত্রী

আওয়ামী লীগ কোনো কর্মকাণ্ড চালালেই ব্যবস্থা: ডিআইজি রেজাউল