কক্সবাজারের বিমান বাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়ায় বাহিনীটির সদস্যদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজনের মৃত্যু ও কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
কক্সবাজারের সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সবুক্তাগিন মাহমুদ সোহেল বিবিসি বাংলাকে একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তির নাম শিহাব কবির নাহিদ।
নিহতের পিতা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তার ছেলে বিমান বাহিনীরগুলিতে মারা গেছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ”বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”
ওই ঘটনার পর বিকেলের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
কীভাবে এই সংর্ঘষের সূত্রপাত? এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
ঘটনার সূত্রপাত্র যেভাবে
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কক্সবাজারের সাংবাদিক আজিম নিহাদ বিবিসি বাংলাকে জানান, কক্সবাজারে বিমানবন্দর ও বিমানঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য কয়েক বছর ধরে শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
যে কারণে সেখানে এখনো পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে স্থানীয়রা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো।
মি. নিহাদ জানান, সোমবার সকালে স্থানীয় সমিতিপাড়া এলাকার জাহেদুল ইসলাম নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন লোক জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় চেকপোস্টে আটকে দেয় বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
এক পর্যায়ে জাহেদুলের সাথে হেলমেট পরা নিয়ে তল্লাশিচৌকিতে কর্তব্যতর বিমানবাহিনীর সদস্যদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। পরে জাহেদকে ধরে বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে স্থানীয়দের সাথে তার কোনো ধরনের সাক্ষাতের বিষয় পূর্বনির্ধারিত ছিল না বলে বিবিসি বাংলাকে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, জাহেদকে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে বিমানঘাঁটির পাশে অবস্থান নেয়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে গুলি ছুড়ে বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
ওই সময়ের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এই গুলি ও সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নাহিদ নামে এক যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনার পর বিকেল তিনটার দিকে আটককৃত তরুণ জাহেদকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকেও মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
এদিকে বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “কক্সবাজার ফ্লুইড সিচুয়েশন। কক্সবাজারের এসপি ও সিকিউরিটি এজেন্সির কাছ থেকে রিপোর্টগুলো চাচ্ছি। তারা আমাদেরকে দিলে আপনারা জানবেন।”
সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু
কক্সবাজারের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় মোট পাঁচজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় শিহাব কবির নাহিদ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত নাহিদের শরীরে থেঁতলে গেছে ও তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সবুক্তাগিন মাহমুদ সোহেল। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে, বলছিলেন তিনি।
এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে আরেকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
নিহতের নাহিদের পিতা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তার ছেলে বিমান বাহিনীর গুলিতে মারা গেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ জানিয়েছে, বিমান বাহিনী ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষের তথ্য পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়। বিকেল পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের সময় স্থানীয়রা ইটপাটকেল ছুড়ে মারছে, অন্যদিকে বিমান বাহিনীর সদস্যরাও গুলি করছেন।

আইএসপিআরের বিবৃতি
কক্সবাজারের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ”কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমান বাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।”
সেখানে বলা হয়েছে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট থেকে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় বাহিনীর সদস্যরা।
”পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে,” বলা হয়েছে আইএসপিআরের বিবৃতিতে।
এই সময় বিমান বাহিনীর চারজন সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন ও শিহাব কবির নাহিদ নামের একজন যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ”রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর বিধান অনুযায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল, যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ”একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলির; যা প্রাণঘাতী নয় এবং শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।”
এতে আরো বলা হয়েছে সেখানে আরো বলা হয়েছে, ”কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয় যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।”
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings