ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ভারতের মহারাষ্ট্র গোসেবা আয়োগ রাজ্যের সব কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটিকে (এপিএমসি) ৩ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত পশুহাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্যজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে শুধু গরু নয়— বরং ছাগল, ভেড়া ও মহিষের মতো পশুর কেনাবেচাও বন্ধ। যার কোনো আইনগত নিষেধাজ্ঞা নেই।
ঈদুল আজহার সঙ্গে কুরবানি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। মুসলমানদের এই ধর্মীয় রীতিতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে ত্যাগ ও আনুগত্যের বার্তা তুলে ধরা হয়।
গত ২৭ মে জারি করা এক চিঠিতে গোসেবা আয়োগ জানায়, ‘রাজ্যে ৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এই সময়ে বিপুল সংখ্যক পশু কুরবানির জন্য কেনাবেচা হয়। মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ (সংশোধনী) আইন, ১৯৯৫ অনুসারে গো-সন্তানের জবাই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইনের প্রেক্ষিতে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ৩ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত কোনো পশুহাট (গুরা বাজার) বসানো যাবে না, যাতে অবৈধ গরু জবাই রোধ করা যায়।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ আইনের আওতায় রাজ্যে গরু, বলদ ও ষাঁড়ের জবাই এবং এমনকি তাদের মাংস রাখাও ফৌজদারি অপরাধ।’
তবে এই সিদ্ধান্তকে ছোট ব্যবসায়ীদের প্রতি অবিচার বলে মন্তব্য করেছে ভঞ্চিত বহুজন আঘাড়ি (ভিবিএ)। দলটি বলছে, গরুর অবৈধ কেনাবেচা রোধ করা জরুরি, কিন্তু তার জন্য পুরো বাজার বন্ধ রাখা ভুল। এতে কেবল গরু নয়, ছাগল, মহিষ ও অন্যান্য পশুর কেনাবেচাও বন্ধ হয়ে যাবে, যার ওপর কোনো আইনি নিষেধ নেই।
দলের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত কৃষক, শ্রমজীবী, মধ্যসত্ত্বভোগী ও ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থের পরিপন্থী। এতে পশু পরিবহনকারী ও কসাই সম্প্রদায়, বিশেষত খাতিক-কুরেশি সম্প্রদায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দলটির মুখপাত্র তায়েব জাফর বলেন, এই নির্দেশনা কেবল কৃষকবিরোধী নয়, বরং এটি সংবিধান ও আইনের সীমা লঙ্ঘন করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গোসেবা আয়োগ কেবল একটি উপদেষ্টা সংস্থা, তার প্রশাসনিক নির্দেশ জারির অধিকার নেই। এপিএমসির মতো প্রশাসনিক সংস্থাগুলোকে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল।
তায়েব জাফর আরও বলেন, মহারাষ্ট্র পশু সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৬ অনুসারে গবাদি পশুর কেনাবেচা ও পরিবহন নিষিদ্ধ। কিন্তু দেখা যায়, কেবল ক্রেতা ও পরিবহনকারীদেরই দায়ী করা হয়, বিক্রেতাদের নয়—এটি আইনের সাম্যের নীতির পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, ৫-এ ধারার আওতায় আন্তঃজেলা পশু পরিবহনকে বেআইনি হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা আইনের অপপ্রয়োগ। এই ভ্রান্ত চর্চা বন্ধ করতে হবে।
তার মতে, অবৈধ পশু বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হলেও, পুরো পশুহাট বন্ধ করাটা যথোপযুক্ত নয়। আইন যেন সংবিধানের সাম্য ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে প্রয়োগ হয়।
এদিকে গোসেবা আয়োগের চেয়ারম্যান শেখর মুন্ডাডা স্পষ্ট করে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—ঈদের আগে গরু জবাইয়ের সম্ভাবনা বন্ধ করা। অন্য পশুর বিক্রি সাময়িকভাবে, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। আমাদের সার্কুলারটি কেবল পরামর্শমূলক।
মহারাষ্ট্রে বর্তমানে ৩০৫টি প্রধান ও ৬০৩টি সহায়ক এপিএমসি রয়েছে। রাজ্যে ২৯২টি পশুহাট চালু রয়েছে, যার অধিকাংশই এপিএমসির আওতায় পরিচালিত।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings