in

ইসলামে হাদিসের প্রয়োজনীয়তা

কখনো ভাবতে পারিনি এই বিষয় নিয়ে লিখতে হবে কিন্তু অনেকদিন ধরে বেশ কিছু লোক এইসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছে তাই আজকে এই বিষয়টা নিয়ে লিখব ভাবছি

প্রথমেই কিছু লেখার আগে যারা এই বিষয় নিয়ে ভাবছে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে একটু দেখি

ইসলামে হাদিসের প্রয়োজনীয়তা নেই এই বিষয়টি প্রথমে উত্থাপন করে মোফাজ্জল ইসলাম এবং এখনকার অনেক ফলোয়ার এবং তারা অনেকেই ফেসবুকে এসব বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে

তাদের মাথায় এই প্রশ্নটি আসে আমি মনে করি একটি কারণ,  আর সেটি হল যে অনেক হাদিস সহি এবং সহি না বলে আমরা জানি যা অনেক সময় আমাদের জীবন ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করে

মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হয় এইসব হাদিস এর কারনে আমরা অনেকে ভাবি আমরা সঠিক আবার অন্য কয়েকজন ভাবে তারা সঠিক.  তাই তারা ভাবছে যদি হাদীসকে বিলুপ্ত করে দেওয়া যায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে এটাই আসলে তাদের মূল বক্তব্য

তারা মনে করে যেহেতু কোরআন একটি তাই হাদিস বাদ দিয়ে যদি সবাই কুরআন কে অনুসরণ করে তাহলে মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ দূর হবে এবং শিয়া-সুন্নি অবসান ঘটবে

এখন আমি আমার নিজের কথায় আছি

কোরআনের অনেক জায়গায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে অনুসরণ করার কথা বলা রয়েছে যেমন

3:31-32 “তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ কর [অর্থাৎ মুহাম্মাদ],… বল, ‘আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর’।”
4:59 “হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, এবং আনুগত্য কর রাসূলের, এবং যাদেরকে তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে…” (আনুগত্য আয়াত নামে পরিচিত)
4:69 “এবং যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে – তারা তাদের সাথে থাকবে যাদের উপর আল্লাহ নবীদের অনুগ্রহ করেছেন …”
24:54 “বলুন: আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর, … যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য কর, তবে তোমরা সঠিক পথের উপর থাকবে”
33:21 “ঈশ্বরের বার্তাবাহকের মধ্যে আপনার কাছে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেকের জন্য একটি উত্তম উদাহরণ রয়েছে যারা ঈশ্বর এবং শেষ দিনের আশা নিয়ে অপেক্ষা করে ..

কিন্তু এগুলো তাদের দেখানোর পরেও তারা আপনাকে অন্য কিছু দেখাবে তাদের দিকটাকে তুলে ধরার জন্য কারণ কোরআন অনেক বড় একটি গ্রন্থ এবং আল্লাহর বাণী এবং এখানে অনেক ভাবেই অনেকে অনেক কিছু প্রমাণ করতে পারে

এখান ওখান থেকে এক লাইন বা 2 লাইন নিয়ে যেমনটি আমি উপরে করেছি

তাই এসব কোরআন আয়াত দিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না কারণ তারা তাদের নিজেদের কথা অন্য আয়াতে মাধ্যমে বলবে

তাই আমি এখন যুক্তি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করব

সব সময় দেখবেন তারা হাদিস মানতে নিষেধ করবে কিন্তু তারা নিষেধ করার কে

যেমন ধরুন আমি সুন্নত নামাজ খুব একটা পড়ি না কিন্তু এটা কি আমার নিজস্ব বিষয় নাকি আমি মানুষকে আমার মতন সুন্নত নামাজ না পড়তে বলবো আমি কোনমতে ফরজ নামাজ পড়ি তারপর কম্পিউটারে বসে গেম খেলি

আমি কোন এক জায়গায় শুনেছি সুন্নত একেবারে ছেড়ে দেওয়া গুনা তাই আমি মাঝে মাঝে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়ে থাকি এবং বেশিরভাগ সুন্নতি পড়িনা যেটা আমার নিজের ইচ্ছা এবং আমি কখনোই কাউকে সুন্নত পড়া থেকে বিরত থাকতে বলবো না কারণ আমি জানি আমি অলস এবং আল্লাহ ভীরু অতটা না তাই আমি সুন্নত পড়ি না

আমি সব সময় তাদেরকে সম্মান করি যারা ফরজের পাশাপাশি সুন্নত পরে থাকে এবং আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই আমি জানি সব সুন্নত পড়তে পারি

আমি খুব একটা হাদিস পড়ি নাই তাই বলে কি আমি এখন মানুষকে হাদিস থেকে সরে আসতে বলব কারণ আমি নিজে অলস এবং পড়াশোনায় ইচ্ছুক না

খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ, বাথরুমে ঢোকার বের হওয়ার দোয়া, পায়ের গোড়ালির উপরে প্যান্ট পরা, কথা দিয়ে কথা রাখা, যাকাত দেওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া, কুলুপ নেওয়া, অজু করা, জানাযা পড়া, দান-খয়রাত করা, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ঝগড়া বিবাদ মেটানো, সম্পত্তি ভাগাভাগি, অন্যায় কে শাস্তি দেওয়া, এবং একটি মানুষের জীবনব্যবস্থা পুরোটাই হাদিসের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব

হাদিস,নবী মুহাম্মদের ঐতিহ্য বা বাণীর রেকর্ড, ধর্মীয় আইন এবং নৈতিক নির্দেশনার একটি প্রধান উৎস হিসাবে সম্মানিত

হাদিস কেউ যদি না মানে সে ইসলামের পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা মানতে পারবে না কারণ কোরআনে সবকিছু বলা নেই যেমন নামাজ কয় ওয়াক্ত ইত্যাদি

আমাদের নবী যা করেছেন এবং যা বলেছেন এগুলা সম্মিলিত হচ্ছে হাদিস

ভুলে গেলে চলবে না কোরআনটা আমরা তার মুখেই শুনেছি এবং তার মৃত্যুর পর কোরানটা অনেক বছর মানুষের মুখেই ছিল

পরবর্তীতে এটা লিখিত আকারে কোরআনের বাণী হিসেবে তুলে ধরা হয় এবং এটির করেন সাহাবীরা এবং সাহাবীরা কোরআন ও সুন্নাহ লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেন

কোরআন হাদিস দুটি সাহাবীদের লিখে যাওয়া একটি বিশ্বাস করলে আরেকটি কেন নয়

যারা মনে করে নবী ডেলিভারি ম্যান অর্থাৎ তার কাজ ছিল শুধু কোরানটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া তারা অবশ্যই ভুল করবেন নবী কাজ ছিল কোরানটা আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং এই কোরআন তাকে কিভাবে মানতে হবে তা দেখিয়ে দেওয়া এবং দুটাই উনি করেছেন

তাকে যদি মনে করে হাদিস মানা দরকার নাই সেটা তাদের ভিতর রাখা ভালো তাদেরকে কেউ দায়িত্ব দিয়ে যায়নি মানুষকে বলা হাদিসের প্রয়োজনীয়তা নাই যদি তারা বলে তাহলে বুঝতে হবে এটা তাদের নিজস্ব বিশ্বাস না তারা কারোর হয়ে কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এবং এজেন্ডা অবশ্যই এসছে নবীর আমল থেকেই

নবীর আমলে অনেকে নবীকে প্রশ্ন করতেন এটা কি আল্লাহর বাণী নাকি আপনি নিজেই বলছেন

এখান থেকেই বোঝা যায় নবীর উপর সকলেরই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে না করলে তার বলা কোরআন বিশ্বাস করা যাবেনা কারন পুরা কোরআন কি তার মুখ থেকেই আসছে আল্লাহর মাধ্যমে এবং মৃত্যুর পরে এই কোরআন যেই সাহাবীরা লিখে রেখে দিয়ে গেছেন আমাদের মাঝে তারাই হাদিস বর্ণনা করে দিয়ে গেছেন সুতরাং তাকে বিশ্বাস করা জরুরি

ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম আশ-শাফিঈ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এনারা নবীর চলে যাওয়া তিনশো চারশো বছর পরেও হাদিস সংরক্ষণ করেছেন যা অনেকে প্রশ্ন করে কিভাবে . আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম আশ-শাফিঈ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ এনারা নবীর চলে যাওয়া তিনশো চারশো বছর পরেও হাদিস সংরক্ষণ করেছেন যা অনেকে প্রশ্ন করে কিভাবে সম্ভব

এর জন্য আপনাদের জানতে হবে তারা কত বছর কিভাবে পরিশ্রম করে এই হাদীসগুলো সংরক্ষণ করেছেন নবীর আমলের সাহাবীগণদের লিখে যাওয়া বিভিন্ন বই থেকে তাই এই সংরক্ষণ তারা অতীতে লিখে যাওয়া অনেক বই গাছে কাগজে ইত্যাদি অনেক ভাবে লিখে যাওয়া হাদিস থেকে সংরক্ষণ করে আমাদের দিয়ে গেছেন তাদের পরিশ্রমের কথা গুলো আমাদের অবশ্যই জানা জরুরী

শেষ কথা এটাই বলব আপনি যদি হাদিস না মানেন তাহলে মৃত্যুর পরে আপনার বিচারের সময় আপনি জানতে পারবেন আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাকি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

কিন্তু যখন আপনি মরিয়া হয়ে অন্যদেরকে আপনার নিজের ইচ্ছা কে চাপিয়ে দিয়ে সব জায়গায় বলে বেড়ান যে হাদিস মানা প্রয়োজন নাই এতে বোঝা যায় আপনার অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে আপনি প্রমাণ করতে চান আপনি সঠিক এবং আপনি জানেন আপনাদের সংখ্যা অনেক কম তাও কেন আপনাদের প্রয়োজন অন্যদেরকে পাশে টানা

আমি প্রথমে কোরআনের তিনটি আয়াত দিয়ে প্রমাণ করেছে কোরআনের কোন এক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন রাসূলকে মানতে কিন্তু আপনারা সেই কোরআনে জায়গাগুলো মানবেন না কারন আপনাদের উদ্দেশ্য অন্যকিছু কোরআন ও হাদিস মানা টা আপনাদের উদ্দেশ্য নয় আল্লাহ ভালো জানে আপনাদের উদ্দেশ্য কি সবাইকে আল্লাহ হেদায়েত দান করুক আমিন

আমি বিশ্বাস করি যে সকল সহি হাদিস আমরা জানি তা যদি একটি শিশু তার বড় হওয়া জীবনে কাজে কর্মে মেনে চলে তাহলে নিঃসন্দেহে সে একজন ভালো মুসলিম হতে পারবে এবং সে সুন্দরভাবে তার জীবন গড়ে তুলতে পারবে তাই একটি মানুষ যদি হাদিস মেনে চলে তাহলে আমার সমস্যাটা কোথায়

আমি মানি না তাই বলে কি সবাইকে হাদিস মানা থেকে বিরত রাখবো,  একটাই আমার মূল উদ্দেশ্য এবং এই পৃথিবীতে মূল আদর্শ

হাদিস কালেকশন (সব একক) হল নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাদিসের একটি চূড়ান্ত সংগ্রহ যাতে ১৪টি সর্বাধিক স্বীকৃত এবং প্রামাণিক হাদিস বই থেকে ৪১০০০+ হাদিস রয়েছে। হাদিস কালেকশন (সব মিলিয়ে এক) হ’ল নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাদিসের চূড়ান্ত সংগ্রহ।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ শাহাদা, সালাত ৫ বার (নামাজ),যাকাত, রোজা এবং হজ. এই পাঁচটি ছাড়া বাকি সব মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে আপনি বাকি হাদিস গুলো ফলো করতে পারেন নাও করতে পারেন আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা তাই এখানে এইগুলা মানা না মানার প্রশ্নই আসে না আপনি মানলে করেন না মানলে করেন না আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা কাউকে বলার অধিকার নাই ধন্যবাদ

আপনি সব হাদিস মানলে সোয়াব পাবেন, না মানলে ক্ষতি হবে না তাই এই নিয়ে লেখালেখি বা কাউকে বলার কোন প্রয়োজন নেই আমি দেখিনা

এই লিংকে Gharib-ul-hadith গেলে আপনি প্রথম যে হাদিস আরবিতে লেখা তা পড়তে পারেন এটি নবী আমলেই লেখা কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই পড়তে পারবো না

এছাড়াও একটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আল-আস বলেছেন:

আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি তা মুখস্থ করার জন্য আমি লিখতাম এবং কুরাইশদের (কয়েকজন সাহাবী) আমাকে থামতে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন: “তুমি কি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে যা শুনেছ তা লিখে রাখবে যদিও তিনি একজন মানুষ [একজন দেবদূত নয়] যে [কখনও] রাগে এবং [কখনও] আনন্দে কথা বলে?”

তাই আমি লেখা বন্ধ করে দিলাম এবং আমি এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলাম যিনি তাঁর মুখের দিকে ইশারা করে বললেন: “লিখ! কারণ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তা থেকে সত্য ছাড়া আর কিছুই বের হয় না” (আহমাদ ও আবু দাউদ)

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

ব্যাপক পুরষ্কার সহ জিকির (dhikr) যা পদমর্যাদা বৃদ্ধি করবে

বিশ্বের সবচেয়ে জনাকীর্ণ শহরগুলির মধ্যে একটি মেট্রো রেল