‘ইন্নালিল্লাহ’ কারা পড়বেন, কেন পড়বেন? সে সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। চরম বিপদের সময়ও মানুষ কীভাবে আল্লাহকে স্মরণ রাখবে, তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে, তা-ও ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা (এসব) বিপদে পতিত হয়, তখন বলে- নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭) এ তিনটি আয়াতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কারা ইন্নালিল্লাহ পড়বেন, কোন পরিস্থিতিতে পড়বেন, পড়লে কী উপকার হবে? এ সবের বর্ণনা উঠে এসেছে।
বর্ণিত আয়াতের আলোকে এ কথা পরিষ্কার যে-
– আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদ-আপদ (ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্ট) দেবেন।
– বিপদের এসব মুহূর্তে মুমিন বান্দা সবর করবেন।
– বিপদেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলবেন-নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।
– বিপদে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী এসব বান্দার প্রতি আল্লাহ অফুরন্ত রহমত ও অনুগ্রহ দান করবেন।
কুরআনুল কারিমে তুলে ধরা এ আয়াতটি মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা ও প্রশান্তির দোয়া বা পরিভাষা। এ অসাধারণ বাণী পাঠ করার মাধ্যমেই বড় বড় দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-মুসিবতে ঈমানদার বান্দা প্রশান্তি খুঁজে পায়। আর তা পাঠ করলে মানুষের সব দুঃখ-বেদনা ও বিপদ-মুসিবতের কষ্ট অন্তর থেকে দূরীভূত হয়ে যায়।
মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি পরিভাষাই হওয়া উচিত। আর তাহলো এ বাক্যের প্রথম অংশ- ‘ইন্না লিল্লাহ’ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য। কেননা অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জীবনে বান্দার সব কিছু তার জন্য বলে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার আত্মত্যাগ, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্ব জগতের মালিক আল্লাহ তাআলার জন্য।’
আর দ্বিতীয় বাক্যে রয়েছে সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা যে, ‘ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। আর নিশ্চয়ই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’ এটিই বাস্তব সত্য।
পরকালের সীমাহীন জীবনে যাওয়ার সিড়ি মৃত্যু নামক গাড়িতে পা দেবে না- এমন কোনো শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান ব্যক্তি পৃথিবীতে জন্ম নেয়নি আর জন্ম নেবেও না।
আল্লাহ তাআলার কথা- ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন তথা আর নিশ্চয়ই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’ কেউ এ যাত্রা থেকে বাঁচতে পারবে না। তার কাছে ফিরে যেতেই হবে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ বলেন-
– كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। অতপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৭)
– كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আর আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৫)
– كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বিনিময় লাভ করবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাত দান করা হবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)
মৃত্যুর সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা কার্যকর হবে। কারও জন্য সময় ক্ষেপন করা হবে না। কেউ অতিরিক্ত সময়ও পাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ
‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি (মৃত্যুর) মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ (মৃত্যু) এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩৪)
আবার মৃত্যু থেকে পালিয়েও কেউ বাঁচতে পারবে না। তার কাছে ফিরে যেতেই হবে। এ বিষয়টি মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন এভাবে-
أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِ اللّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُواْ هَـذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلًّ مِّنْ عِندِ اللّهِ فَمَا لِهَـؤُلاء الْقَوْمِ لاَ يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুত তাদের কোনো কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে। বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোনো কথা বুঝতে চেষ্টা করে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭৮)
মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহকে স্মরণ রাখা ও তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য এক অনন্য আয়াত, পরিভাষা কিংবা দোয়া হলো ছোট্ট এ আয়াতাংশ-
إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।’
যা পড়লে বান্দা যেমন প্রশান্তি ও সান্ত্বনা লাভ করেন, তেমিন মহান আল্লাহর বান্দার এ কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা সীমাহীন খুশি হন। ওই বান্দার ওপর মহান আল্লাহ রাজি-খুমি হয়ে তার উপর দান করেন অফুরন্ত রহমত ও অনুগ্রহ। যা পরকালের কঠিন সময়েও অব্যাহত থাকবে।
তাই শুধু মানুষ মারা গেলেই নয়, বরং সুখে ও দুঃখে, আনন্দ-বেদনায়, বিপদ-মুসিবতে অর্থাৎ সব সময় মহান আল্লাহর শুকিরয়া আদায় করে তার অনুগ্রহ ও নৈকট্য লাভে বেশি বেশি ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়া জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় বেশি বেশি ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings