আকাশ – খুটি হীন এক অবাস্তব বিষ্ময় এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার বড়ত্বের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ
কোনো এক পূর্ণিমার রাতে ঝিরঝির বাতাস বইছে চারদিকে। আপনি ইট কংক্রিটের মাঝে থেকে গরমে হাসফাস করছেন।বিদ্যুৎ নেই আপনার বাসায়। হঠাৎ মনে হলো বাইরে থেকে শরীরে একটু শান্তির বাতাস লাগিয়ে আসা যাক৷ আপনার বাসার পাশের সুবিশাল মাঠের কোনের ছোট্ট বেঞ্চ টিতে আপনি শুয়ে পরলেন। এবার নিবিড়ভাবে শরীরের সমস্ত ইন্দ্রীয় গুলোকে সজাগ রেখে আকাশপানে তাকালেন। চাদ মামার আলোর বন্যায় তারারা যেন সব হারিয়ে গেছে। এই বিশাল পৃথিবীর ছোট এক কোনে শুয়ে থেকে আপনি হয়তো আপনার জীবনের হিসাবনিকাশ মিলানোর চেষ্টা করছেন। এরপর তাকালেন আকাশের দিকে। ভাবতে শুরু করলেন পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে৷ আপনি কৌতুহলী হয়ে ভাবতে লাগলেন, আপনি যেই চারতলা ফ্ল্যাটে থাকেন তা বানানোর জন্য কতজন শ্রমিকের কতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়েছে। এরপর আবার তাকালেন আকাশের দিকে। ভাবতে লাগলেন, প্রায় ভূমিকম্পে ওলটপালট হয়ে যায় সব কিছু। আপনার ফ্ল্যাটের সিলিং টাও কি একটু কেপে উঠেছিলো?
ভূমিকম্প বেশি হয় জাপানে, জাপান আমাদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে শিক্ষা, প্রযুক্তি,অর্থনীতি তথা যেকোনো দিক দিয়ে। সেই দেশের উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি এত মজবুত ফাউন্ডেশন এর বিল্ডিং কিভাবে টলে গেলো? কিভাবে ছাদগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো?
তারপর আপনি আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা মেলানোর চেষ্টা করছেন। আপনি উঠে বসলেন। বেঞ্চের উপরেই খালি পায়ে দাড়ালেন। যতটুকু পর্যন্ত আকাশের সীমানা দেখা যায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে কিংবা মাথা উঁচুনিচু করে, সেই সুবিশাল ছাদের ফাউন্ডেশন খোঁজার অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। না,কোথাও একটি খুটিও দেখা যাচ্ছেনা। এবার আপনার মনে নাড়া দিতে থাকলো, যে ফ্ল্যাটের ছাদ এত মজবুত ফাউন্ডেশন এর উপর দাড় করানো হয়েছে সে ছাদ সামান্য ভূমিকম্পে টলমল করে। কিন্ত আমার আপনার মত এত কোটি কোটি বিল্ডিং এর উপরে যে ছাদটি রয়েছে তা কোনোদিন টলে যায় না।
আপনি ছুটে গেলেন আপনার বাসায়। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎও চলে এসেছে। আপনি ওজু করে আপনার বাসায় থাকা কুরআন এর সংক্ষিপ্ত একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ নিয়ে বসে পরলেন।
আপনি সূচিপত্র দেখে এসে পরলেন, সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াতে। মহান আল্লাহ যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলে রেখেছেন-
“পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দেন এবং তা সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন। তিনি সব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।” সূরা বাকারা, আয়াত-২৯।
আপনার অবাক হওয়ার মাত্রাটা ক্রমশই বাড়তে লাগলো। যেই সুবিশাল ছাদ আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দৃশ্যমান এর উপরে মহান আল্লাহ আরো ৬ টি ছাদ(আকাশ) সৃষ্টি করে রেখেছেন!
আপনি আরো আগাতে লাগলেন,আপনার যেন পড়ার তৃষ্ণা পেয়েছে আজ!
চলে গেলেন একুশ পাড়ার সূরা রূমে। মহান আল্লাহ তায়া’লার সুস্পষ্ট ঘোষণা :
“তাঁর নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটি যে আসমান-জমিন কেবলমাত্র তাঁর আদেশের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে“। (সুরা : রোম, আয়াত : ২৫)।
আপনি আমি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে যে ছাদ তৈরি করি, আমাদের উপরের সেই সুবিশাল ছাদ শুধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার একটি নির্দেশেই সৃষ্টির শুরু থেকে এভাবে দাড়িয়ে আছে!
এরপর আপনার নজর গেলো ভয়ঙ্কর বর্ণনা দেওয়া এক আয়াতের দিকে!
“অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন, তেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন।” সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৯২।
চিন্তা করুন একবার, সেই সামান্য ছাদের টলমলে অবস্থা দেখে আপনার আমার মত কত লোক ঘরের বাহিরে দৌড়ে চলে আসে। অথচ মহান আল্লাহ তায়া’লার স্পষ্ট ঘোষণা –
“প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।”
সূরা আল আরাফ, আয়াত : ৩৪
স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, আপনার সময় শেষ হয়ে এলে আপনি মাঠে, বাসায়, অফিসে কিংবা দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ সিকুরিটি সম্পন্ন বিল্ডিং এ বসে থাকলেও মৃত্যু তার নির্দিষ্ট টাইমে আসবেই!
এবার আকাশ সম্পর্কে তো অনেকটা জানলেন। আল্লাহ চাইলেই আপনার আমার উপর যেকোনো সময় যেকোনো বিপদ দিতে পারেন। আকাশ ভেঙ্গে ফেলতে পারেন! কিন্ত আপনি আমি প্রত্যহ এত এত অপরাধ করার পরেও আল্লাহ আমাদের বারবার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছেন ভালো হওয়ার,আল্লাহর পথে আসার। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর রাস্তায় আসায় উপযুক্ত সময় এখুনি। শয়তানের ধোকায় পরে গুনাহ করে ফেললেও সাথেসাথে তওবা করে আল্লাহর রাস্তার দিকে ধাবীত হওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য এবং তা নিজেদের ভালোর জন্যই।
মনে রাখবেন, এত ছোট ছোট ছাদ গুলো যখন সামান্য ভূমিকম্পে গুড়িয়ে যায় আমরা দিশেহারা হয়ে যাই,কত মানুষ মারা যায়। আর সমস্ত পৃথিবী সহ হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র, গ্রহ, ইউনিভার্স, মাল্টিভার্স সহ নাম না জানা আরো সুবিশাল ক্ষেত্রকে আগলে রাখা সেই আকাশ আমাদের উপর ভেঙ্গে পরলে আমাদের কী অবস্থা হবে! আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন এবং পৃথিবী ও অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য নিয়ে ভাবার মত শক্তি আমাদের মস্তিষ্কে দান করেন।আমিন।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings