ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন তিনটি এনওসিএস শ্যামলী, সাতমসজিদ ও সিদ্ধিরগঞ্জ দপ্তরের আওতাধীন অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পসমূহের ১১টি হিসাবের বিপরীতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া জমা হয়েছে। বিহারি ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে চায় না বলে এই পরিমাণ বকেয়া পড়েছে। এমনকি বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ বা প্রিপেইড মিটার স্থাপনেও ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা অনাগ্রহী।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে বিদ্যুৎ অফিসগুলো কঠোর হলে বা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে বিহারি ক্যাম্প থেকে বিদ্যুৎ অফিসে হামলার হুমকি আসে। এমন সব অভিযোগ উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক বৈঠকে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিহারি ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। ডিপিডিসির তিনটি এনওসিএস শ্যামলী, সাতমসজিদ ও সিদ্ধিরগঞ্জ দপ্তরের আওতাধীন অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পসমূহের ১১টি হিসাবের বিদ্যুৎ বিল মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিশোধ করা হতো। পরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (ত্রাণ প্রশাসন) সভাপতিত্বে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পসমূহের বকেয়াসহ হালনাগাদ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসংক্রান্ত সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যেহেতু অবাঙালিরা (বিহারি) বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা পেয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ মার্চের পর থেকে আর তাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে না।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অবাঙালি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করতে ক্যাম্পের পক্ষে মো. সাদাকাত খান ফাকু হাইকোর্ট রিট পিটিশন (নম্বর-৪০৮৯/২০১৮) দায়ের করেন। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট অবজারভেশনসহ রিট পিটিশন ডিজঅ্যাগ্রি করা হয়। পরে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগ হতে রিট পিটিশনের (নম্বর-৪০৮৯) রায় দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়,
সেই রায়ে বলা হয়েছে অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পসমূহের বকেয়াসহ হালনাগাদ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসংক্রান্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২০২৭ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী কেবল সরকারি দপ্তরসমূহের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য এবং রিটের বিবাদীদের তা প্রেরণ করা হয়নি। তাই ওই কার্যবিবরণীর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২-এর অধীনে রিট মামলা দায়েরের সুযোগ নেই।
এ ছাড়া আটকেপড়া পাকিস্তানিরা ১০টি জেলায় অবস্থিত ক্যাম্পে বসবাস করেন। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্পসমূহের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। উল্লেখ্য, ২ নম্বর বিবাদী অর্থাৎ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্তৃক রিট পিটিশনের (নম্বর ৩৮৮৮/২০০৫) আলোকে উক্ত বিহারি ক্যাম্পসমূহের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কারণ আদালত উক্ত বিদ্যুৎ বিল সরকার কর্তৃক পরিশোধের বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেন।
ইতোমধ্যে অবাঙালি (বিচারি) ক্যাম্পসমূহের কয়েকজন বাসিন্দা প্রি-পেমেন্ট মিটারের মাধ্যমে নিজের নামে বিদ্যৎ সংযোগ নিয়েছেন। এমতাবস্থায় বিবাদী সব বাসিন্দার নামে নিয়মিত বিল পরিশোধের শর্তে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করতে পারে। সেখানে বলা হয়েছে, বিহারিদের বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে সঠিক প্রক্রিয়া আবেদন করতে। একই সঙ্গে আদালতের রুল নিষ্পত্তি করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশনস) কর্তৃক অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পসমূহে বাসস্থানসহ অন্যান্য স্থাপনায় প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়ে দপ্তরাদেশ জারি করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুরের অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পের প্রতিনিধিবৃন্দের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী এনওসিএস শ্যামলীতে বৈঠক করেন। সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে মোহাম্মদপুরের অবাঙালি (বিহারি) ক্যাম্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের বাণিজ্যিক, আবাসিক অংশে প্রি-পেইমেন্ট মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হবে।
ডিপিডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সেই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে বিহারি ক্যাম্পগুলোকে বারবার বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য চিঠি ও আহ্বান করা হলেও তাতে তারা সাড়া দেয়নি। পরে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখলে ক্যাম্পের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসতে পারে জানালে সংযোগ দিয়ে দেওয়া হয়। ডিপিসি সূত্রে জানা যায়, এর পর আরও কয়েকবার বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে আহ্বান করলেও তারা নেয়নি।
এর পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে ক্যাম্পের কোনো ব্যক্তিই মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করেনি। বরং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে টেলিফোনে ক্যাম্পে বসবাসরত ৭০ হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে এসে বিদ্যুৎ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার হমকি প্রদান করে, যার ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেওয়া হয়।
ডিপিডিসি জানায়, বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও বিহারি ক্যাম্পসমূহে মিটার লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। গত ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ক্যাম্পসমূহে ডিপিডিসির পাওনা টাকা ১৫৫ কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৮০১। এ ছাড়া প্রতিমাসে আরও ২ কোটি ঢাকা করে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিহারিদের বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে আনতে না পারলে রাষ্ট্রের অনেক টাকা লোকসান হবে প্রতিবছর।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings