স্টাফ রিপোর্টার : ‘তথ্য গোপন ও মায়ের ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এই মামলায় পুতুল, মা শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। ক্ষমতায় পালাবদলের পর এই প্রথম পুতুলকে দুর্নীতির কোনো মামলায় আসামী করা হল। গতকাল রোববার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করার বিষয়টি এর আগে বিকালে এক ব্রিফিংয়ে জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগাসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নং রোড হতে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দ-বিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার আসামীরা হলেন- সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের সাবেক পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম এবং রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন।
প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।
পূর্বাচল নতুন শহরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ছয়টি প্লটে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকী। তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে আরও জানান, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে আরও ৫ টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই মামলাগুলো দায়ের করা হবে।
আইনজীবীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের নামে মামলা : ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট নুপুর আখতারকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৯৩ জনের নামে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালতে ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
মামলায় আরও যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসানুল হক ইনু, আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দিন, নসরুল হামিদ বিপু, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার প্রমুখ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ৪ আগস্ট বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ভুক্তভোগী নুপুর আখতার অংশ নেন। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে গুলী করলে তার বাম হাতে একটি গুলী এবং মাথায় আরেকটি গুলী লাগে। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হুমকিতে চিকিৎসা না করে ফেরত যেতে হয়। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে থাকেন। পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাথার এক্সরে করেন। চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে তাকে অপারেশন করতে বলেন। ১৭ ডিসেম্বর অপারেশন করে তার মাথা থেকে গুলীর বিচ্ছিন্ন অংশ বের করা হয়।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings