in

কমলার হারের নেপথ্যের কারণ

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে এই রিপাবলিকান প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তবে নির্বাচনপূর্ব জনমত জরিপগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও, ভোটে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। ট্রাম্পের কাছে রীতিমতো ধরাশায়ী হয়েছেন কমলা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছেন রিপাবলিকানরা। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের এই ভরাডুবির পেছনের সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

নির্বাচনী বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসন ও দেরিতে প্রচারণা শুরু করা কমলার হারের অন্যতম কারণ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিদায়ী প্রশাসন মূল্যস্ফীতিতে কমাতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের সমর্থন হারিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। বাইডেন প্রশাসনের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামছাড়া হয়ে উঠেছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তগুলোর ক্রমাগত উন্নতি হলেও বিভিন্ন জরিপে ভোটারদের হতাশা দেখা গেছে। ট্রাম্পও এর সুযোগ নিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী সমাবেশে অবিরত দ্রব্যমূল্য ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলে গেছেন। অলাভজনক থিংক ট্যাংক অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বার্নার্ড ইয়ারস বলেন, জনগণ এখনো মূল্যস্ফীতিকে সমস্যা হিসেবে দেখেন। কারণ, তারা অর্থনীতিবিদদের মতো কয়েক বছরের হার নিয়ে পর্যালোচনা করেন না, বরং তারা দাম নিয়ে ভাবেন। ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ড স্কুল অব ল-এর অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস মনে করেন, এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে অভিবাসন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাইডেন-কমলা প্রশাসনের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লাখ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার জন্য বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। যেটি ভোটারদের ট্রাম্পের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। 

প্রাথমিক বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, কমলা হ্যারিস প্রায় ৪০ শতাংশ শে^তাঙ্গ ভোট, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ভোট এবং হিস্পানিক ও এশীয়দের প্রায় অর্ধেকের ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প কোনো অশ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না জিততে পারলেও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নাগরিকদের মধ্যে তার সমর্থন বেশি ছিল। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্তো সুরো বলেন, লাতিন পুরুষ, ধর্মপ্রচারক, কলেজে পড়াশোনা করেননি এমন মানুষ ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া গেছে ভোটে। ভৌগোলিকভাবে সীমান্ত এলাকা ও অভিবাসনের কারণে যেসব অঞ্চলে সরাসরি প্রভাব পড়ছে, এমন জায়গাগুলোতেও ট্রাম্প কমলার থেকে বেশি সমর্থন পেয়েছেন। এমনকি অতীতের মতো এবারও নির্বাচনী প্রচারে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। 

এমনকি নির্বাচনী প্রচারে গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তবুও মঙ্গলবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি নারীদের সমর্থন ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কমলার হারের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেরিতে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা। নির্বাচনে শুরুতে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে দলীয় মনোনয়ন পান কমলা। ফলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য মাত্র তিন মাস সময় পেয়েছিলেন কমলা। 

নির্বাচনে কমলার হেরে যাওয়ার পেছনে এটাকেও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যারি সাবাতো বলেছেন, নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিপর্যয়ের দায়ের বেশিরভাগটাই জো বাইডেনের। সেই সঙ্গে নিজেকে বাইডেনের চিন্তা-ভাবনা থেকে আলাদা প্রমাণ করতে হিমশিম খেয়েছেন কমলা। বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রভাবও পড়েছে তার ওপর। এর পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিও এই ভরাডুবির অন্যতম কারণ। একদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চেষ্টা, অন্যদিকে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা এমন দ্বৈত নীতির কারণে ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাট ঘেঁষা আরব আমেরিকানদের ভোট হারিয়েছেন কমলা। এটিও নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে কমলার হারে নেপথ্য ভূমিকা রেখেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!

Report

What do you think?

Written by Sultana

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Loading…

0

ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ বাইডেনের

মার্কিন নির্বাচনে জয়ী হয়ে রেকর্ড গড়লেন দুই মুসলিম নারী