ইমিউন সিস্টেম কী?
প্রত্যেক দেশের সীমান্তে যেমন কিছু অতন্দ্র প্রহরী নিয়োজিত থাকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের শরীরের বর্ডারেও এমন কিছু কোষ,লিম্ফ(বর্ণহীন তরল), উপকারী পরজীবি রয়েছে যা সম্মিলিতভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম সৃষ্টি করেছে। আমাদের ইমিউন সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৩ টি স্তরে বিভক্ত হয়ে আমাদের দেহকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
#1 প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর
আমাদের ত্বক দেহের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করে। আমাদের স্কিনের কোষগুলো গুরুত্বপূর্ণ এন্টিমাইক্রোবাইয়াল প্রোটিন রিলিজ করে যা বহিরাগত পরজীবির বিরুদ্ধে কাজ করে। আমাদের ত্বক কিছুটা এসিডিক যা জীবানুর জন্য যথার্থ পরিবেশ নয়। এছাড়া লোম, সিরুমেন(কানের ভেতর থেকে ক্ষরিত একধরণের পদার্থ), পৌষ্টিকনালির এসিড, রেচনতন্ত্রের এসিড ইত্যাদি প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে কাজ করে।
#2 দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা স্তর
এই স্তর আরেকটু এডভান্স লেভেলের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এই স্তরে ফ্যাগোসাইট(একধরণের শ্বেত রক্ত কণিকা যা জীবাণু বক্ষণ করে),ন্যাচারাল কিলার কোষ(NK সেল),ইন্টারফেরন এবং ২২ ধরণের প্লাজমা নিয়ে গঠিত কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম আমাদেরকে সুরক্ষা প্রদান করে। এই স্তরের সুরক্ষার কারণেই আমাদের জ্বর হয়ে থাকে এবং কোনো স্থানে ব্যথা পেলে কিংবা টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আক্রান্ত স্থান টি ফুলে যায় কিংবা লাল হয়ে যায়।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
#3 তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর
দেহের সর্বশেষ প্রতিরক্ষা স্তর। যাকে আমরা অর্জিত প্রতিরক্ষা বলে থাকি। এই প্রতিরক্ষা আমাদের জন্মগত প্রাপ্ত নয় বরং পরবর্তীতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফলে কিংবা কোনো জীবানুর সংস্পর্শে এলে সৃষ্ট এন্টিবডির মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে থাকে।
নানা কারণে এই ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধুমপান,ভেজাল খাবার গ্রহণ, ধুলাবালিময় স্থানে কাজ করা সহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কে দুর্বল করে দেয়। আজকের পোস্টে এই সিস্টেম কে শক্তিশালী করার কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন শুরু করা যাক।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
#4 আয়রণ যুক্ত খাবার খান
বিভিন্ন আয়রণ যুক্ত খাবার যেমন আনাড়,কচু ইত্যাদি আপনার রক্তের কণিকাগুলোকে শক্তিশালী করবে, হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়াবে। মনে রাখবেন ফ্যাগোসাইটোসিস -যে প্রক্রিয়ায় আমাদের শ্বেত রক্ত কণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল দেহে বহিরাগত জীবানু ধ্বংসের কাজ করে থাকে - প্রক্রিয়া শ্বেত রক্তকণিকার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ইন্টারফেরনকে শক্তিশালী করে তুলুন
ইন্টারফেরন একধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন যা পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত কোষের প্রাচির থেকে ক্ষরিত হয়ে উক্ত পরজীবি তথা ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াকে অচল করে দেয়। বিভিন্ন ধরণের খাবার যেমন টকদই, ব্রকলি, গ্রিণ টি, ফ্রেশ চিকেন স্যুপ ইত্যাদি ইন্টারফেরণ এর ক্ষরণ কে বেগবান করে তুলে।
যথার্থ স্বাস্থ্যবিধী মেনে চলুন
করোনা মহামারী তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কের ব্যবহার যে হারে বেড়েছে আমরা সবসময় তা ব্যবহারে সচেতন হলে আমাদের রোগবালাই অনেক কম হতো। যখন আমরা জার্নি করি তখন প্রচুর ধুলাবালি আমাদের নাকেমুখে প্রবেশ করে যা পরবর্তীতে আমাদের ফুসফুসে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। এই ধুলাবালির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরক্ষা সিস্টেম প্রথম প্রথম ভালো কাজ করে থাকে। কিন্ত নিয়মিত ধুলা গ্রহণ করলে সেই ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ। একইভাবে দিনে বেশ কয়েকবার হাত ধোয়ার অনুশীলন আপনাকে আমাকে অনেক ধরণের রোগবালাই থেকে মুক্তি দিতে পারে।
স্ট্রেস মুক্ত থাকুন
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অতিরিক্ত টেনশন এবং বিষণ্ণতা আমাদের এন্ডিবডি উৎপাদন এর হার কমিয়ে দেয়। যা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পারফরম্যান্স কে কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরণের ইয়োগা, সবুজ গাছপালা দেখা, পরিমিত ব্যায়াম আপনাকে শারীরিক ভাবে ফিট রাখার পাশাপাশি মানসিকভাবেও টেনশন মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
সর্বোপরি, যথার্থ সচেতনতা এবং সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমাদের ইমিউন সিস্টেম থাকবে শক্তিশালী।
Leave a Reply
GIPHY App Key not set. Please check settings
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
GIPHY App Key not set. Please check settings